শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে ফের কারসাজি হচ্ছে। গত ৩ কার্যদিবস ধরে শেয়ারটির দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোম্পানিটির এমনভাবে শেয়ার দর বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে রয়েছে নানা গুঞ্জন। কারণ এর আগে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পথের ফকির হয়েছেন। এখন নতুন করে বিনিয়োগকালীদের পথের ফকির করার নতুন ধান্ধা একটি গ্রুপের।

ফলে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর নিয়ে কি কোনো কারসাজি হচ্ছে? এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। গত এক সপ্তাহে ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২০ টাকা। এতে খুবই সন্দেহ চোখে দেখছে বিনিয়োগকারীরা। কারণ কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো কারণই নেই। কোম্পানিটির শেয়ারের এমন উল্লম্ফনে যারা আরও বেশি বাড়বে বলে বিনিয়োগ করছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও জানান বাজার বিশ্লেষকরা।

এর আগে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরো ও তার পরিবারের কারসাজির অভিযোগের তথ্য মিলে। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছিল।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর মাত্র পাঁচ মাস সময়ের মধ্যে ডেল্টা লাইফের শেয়ারের দাম বাড়ে ১৯০ শতাংশ। শেয়ারটির দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩২ টাকায় উন্নীত হয়। আর ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর সময়ের মধ্যে শেয়ারটির দাম ১৩৪ টাকা থেকে ২৩২ টাকায় তোলা হয়। এটি করা হয় অ্যাক্টিভ লেনদেনের (Active Trade) মাধ্যমে। আর এই অ্যাক্টিভ ট্রেডে যুক্ত ছিলেন আবুল খায়ের হিরো ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্য।

ডিএসই তার তদন্তে ডেল্টা লাইফের শেয়ার কারসাজিতে অন্য যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে, তারা হচ্ছেন: আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, তার বাবা আবুল কালাম মাতব্বর, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই সাজেদ মাতব্বর ও মোহাম্মদ বাশার এবং শ্যালক কাজী ফুয়াদ হাসান।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর সময়ের মধ্যে আবুল কালাম মাতব্বর শেয়ারটির মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, আবুল খায়ের (হিরো) ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং কনিকা আফরোজ ৩ দশমিক ১২ শতাংশ লেনদেন করেছেন। ডিএসই ডেল্টা লাইফের শেয়ার লেনদেনে নানা অস্বাভাবিকতা খুঁজজে পেয়েছে, যেগুলো মূলত সিকিউরিটিজ আইনের লংঘন।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, চারদিনে মাত্র ৪৮টি হাওলার মাধ্যমে ডেল্টা লাইফের ১০ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার কেনাবেচা হয়। আর এই পুরো কেনাবেচাটি হয় হিরো ও তার সহযোগীদের মধ্যে। এই লেনদেনগুলো ছিল প্রকৃতপক্ষে সাজানো ও মিথ্যা লেনদেন (ঋধষংব ঞৎধফরহম)। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত ও প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যে এসব লেনদেন করা হয়।

একাধিক দিন সিরিজ লেনদেনের (Series Trade) মাধ্যমে শেয়ারটির দাম বাড়ানো হয় তদন্তে দেখতে পেয়েছে ডিএসই। এর কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখও করা হয়েছে। একদিনের দিনের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, সেদিন সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে সিরিজ ট্রেডিং শুরু করা হয়। তখন ডিএসইতে ডেল্টা লাইফের শেয়ারের দাম ছিল ১৫৯ টাকা ৮৯ পয়সা। বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে শেয়ারটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৪ টাকা ৪০ পয়সা। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে শেয়ারটির দাম বাড়ানো হয় ১২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।