শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সহ আরও তিনজনকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুসন্ধানে শেয়ার কারসাজির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

মুলত ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির দায়ে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)সহ চারজনকে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এছাড়া, জাহিন স্পিনিং মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় পৃথকভাবে আরও চার বিনিয়োগকারীকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তে অভিযুক্তদের শেয়ার কারসাজিতে প্রমাণ পাওয়ায় বিএসইসি এই জরিমানা করেছে। যা আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। ডিএসইর তদন্তে ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজি করে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে দেখা যায়, প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৫ টাকা ৬০ পয়সা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠানো হয়েছে। এতে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এর সহযোগীরা ৬টি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিরিজ লেনদেন করে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং মোহাম্মদ জাহিদুল আবেদীনের প্রত্যেকেরই দুটি করে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল প্রত্যেকের একটি করে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের সিএফও মোহাম্মদ জাহিদুল আবেদিনকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া, ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে এজি মাহমুদকে তিন কোটি টাকা, এসএম মোতাহারুল জামানকে ১৭ লাখ টাকা ও সাইফ উল্লাহকে ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং এর সহযোগীরা ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪ কোটি ২০ লাখ কোটি টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন এবং ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আন-রিয়েলাইজড গেইন করেছেন। এদিকে, এজি মাহমুদ, সাইফ উল্লাহ এবং তাদের সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ার দামে প্রভাবিত করেছেন। তারা শেয়ারটির দাম বাড়িয়ে ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রিয়েলাইজড গেইন করেছেন এবং আন-রিয়েলাইজড গেইন করেছেন ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

শেয়ারটির কারসাজিতে জড়িত হওয়ায় এজি মাহমুদকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। জাহিন স্পিনিং মিলসের শেয়ারেও কারসাজি করার প্রমাণ পেয়েছে ডিএসই। ডিএসইর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাইফ উল্লাহকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। প্রতিবেদনের দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারটির দাম কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে। এই শেয়ার কারসাজিতে সাইফ উল্লাহর রিয়েলাইজড গেইন হয়েছে ১ কোটি টাকা।

অপর এক তদন্তে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জসিম উদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারীকে ১ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। রাষ্ট্রায়ত্ত শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পেয়ে বিনিয়োগকারী শারমিন আক্তার লাভলীকে ২ লাখ টাকা ও নাসির উদ্দিনকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।