শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) সমন্বয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ফান্ডটির আকার ২০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ফান্ড গঠনের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন পর্যন্ত সিএমএসএফে মাত্র ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

মুলত পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট নিরসনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) সমন্বয়ে গত বছরের ২২ আগস্ট ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করে। প্রাথমিকভাবে এ ফান্ডটির আকার ২০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছিল বিএসইসি। পরে এই তহবিলের আকার বাড়ানো হতে পারে বলেও ঘোষণা দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি থেকে সাড়া মেলেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বারবার হুঁশিয়ারি দেয়ার পরও এ পর্যন্ত আশানুরূপ অর্থ ফান্ডে জমা পড়েনি।

শিবলী রুবাইয়াতের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৩১ জুলাই কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হয়েছে। কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সিএমএসএফে নগদ অর্থ ও শেয়ার জমাদানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তহবিলে উল্লেখযোগ্য অর্থ জমা দেয়নি। ফান্ড গঠনের এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও মোট ফান্ডের মাত্র ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিএমএসএফের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) মনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সিএমএসএফের এ পর্যন্ত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৪৮৩ কোটি টাকা। আর বোনাস লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৭১০ কোটি টাকা।’ মনোয়ার বলেন, ‘যদিও কোম্পানিগুলো থেকে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সিএমএসএফের ইনভেস্টর ক্লেইম সেটেলমেন্ট, অ্যাকাউন্টস ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রথম গত বছরের আগস্টের ২৪ তারিখ থেকে টাকা পাওয়া শুরু করি। ১৫ মার্চ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে সেটেলমেন্ট শুরু করি। এরপর থেকে ধাপে ধাপে ৬টি সেটেলমেন্টে আমরা টাকা পেতে থাকি। সর্বশেষ ষষ্ঠ সেটেলমেন্টে আমরা ৭০ লাখ টাকা পেয়েছি।’

তিনি জানান, চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিএমএসএফে নগদ লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৪৮৩ কোটি টাকা। আর বোনাস লভ্যাংশ বাবদ এসেছে ৭১০ কোটি টাকা। সে হিসেবে নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে বোনাস লভ্যাংশ বাবদ ৪ কোটি শেয়ারের বর্তমান বাজারদর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার মধ্যে ২২৫ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পত্তি এই সিএমএসএফের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

ফান্ডটির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশের মধ্যে দাবি করা ৮০ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সিএমএসএফে পরিচালনা পর্ষদ বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সে হিসেবে দাবি নিষ্পত্তি করার পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি টাকা।

সূত্রে জানা গেছে, যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সিএমএসএফে লভ্যাংশ স্থানান্তর করেনি তাদের কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখনো কী পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ চিহ্নিত করা হয়নি এবং নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ পৃথকভাবে ভাগ করার জন্য সিএমএসএফকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অব অপারেশনের (সিওও) কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিএসইসির চিঠি পাওয়ার পরপরই যেসব কোম্পানি এখনো তাদের কাছে রক্ষিত অবণ্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশ জমা দেয়নি তাদের চিঠি দিয়েছে সিএমএসএফ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি ওই চিঠির জবাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। তবে কিছু কোম্পানি সিএমএসএফের চিঠির জবাব এখনো দেয়নি। আর কিছু কোম্পানি শিগগিরই চিঠির জবাব দেবে বলে জানিয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর প্রদান করা ব্যাখ্যা একত্রিত করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ প্রতিবেদন আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হবে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এ বোর্ড অব গভর্নসের মধ্যে চারটি পদ বিএসইসি কর্তৃক নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি তিনটি সদস্য পদ।

ফান্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন সদস্য হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

সিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নসের অন্য সদস্যরা হলেন: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল,

সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন।