শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: খালেদা জিয়া পদ্মা সেতু কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ছিলেন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বলব আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না? শনিবার (২৫ জুন) মাদারীপুরের শিবচর কাঠালবাড়ি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বসে থাকে না, আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব, অনেকে বলেছে আমরা নাকি এই পদ্মা সেতু করতে পারব না। আমার একমাত্র শক্তি আপনারা, একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের মানুষ।’

পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেওয়ার পর আপনারা আমার সাহস যুগিয়েছেন। আজকে আমরা পদ্মা সেতু করেছি। আর কষ্ট হবে না। কাউকে নদী পার হতে বিলম্ব হওয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে না। সেদিন যারা বাধা দিয়ে ছিল তাদেরকে পদ্মা সেতুর মধ্যে দিয়ে একটি উপযুক্ত জবাব দিতে পেরেছি, যোগ করেন তিনি।

জাতির পিতাকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার যাত্রা যখন শুরু করলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন। এই সময়ে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ করেন। যখন দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত ক্ষমতা নিয়ে যান, দুর্ভাগ্য আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। রেহানা ও আমি বিদেশে ছিলাম। দেশে আসতে পারিনি। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে। শত বাধা পেরিয়ে আমি আপনাদের মাঝে আসি।

আমার লক্ষ্য জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করা। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকে আমরা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আজকে আমরা বিনাপয়সায় বই দিচ্ছি। প্রতিটি এলাকায় স্কুল করে দিচ্ছি, কলেজ করে দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়ে শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে মানুষের ঘরের কাছে চিকিৎসার সেবার ব্যবস্থা করেছি।’

দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ওয়াদা ছিল- প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলবে। আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সবার হাতে মোবাইল ফোন। সবাই আজকে অনলাইনে কেনাবেচা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি।

মানুষের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। উন্নত জীবন যাতে সবাই পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এই একটা কারণে বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিয়েছে। নির্বাচিত হয়েছি এবং এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি।’

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সেই ২০০১ সালে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ এ সরকারে এসে আবারও পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করি। তখন তারা কী বলেছিল? বলেছিল, আওয়ামী লীগ কোনোদিনও নাকি পদ্মা সেতু করতে পারবে না।

খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করি— আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কিনা? আমাদের অনেক জ্ঞানীগুণী লোক ছিল, অর্থনীতিবিদ, বড় বড় আমলা ছিলেন, সবাই বলেছেন- নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু সম্ভব নয়। আজকে নিজেদের টাকায় কীভাবে করতে পারলাম?’

উপস্থিত জনগণকে প্রশ্ন রেখে সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘এই বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তি সব থেকে বড় শক্তি। কী বলেন আপনারা? সেটা বিশ্বা করেন তো? জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।’

পদ্মা সেতু নির্মাণে ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ড. ইউনূস তার ওই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থেকে চলে যেতে হলো। ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে তদবির করে, আমেরিকায় তদবির করে, পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিলো। বললো, দুর্নীতি হয়েছে। কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতু আমাদের প্রাণের সেতু। যে সেতুর সঙ্গে আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেই সেতু করতে গিয়ে কেন দুর্নীতি হবে? তারা (বিশ্ব ব্যাংক) টাকা দেয়নি। অথচ দুর্নীতির ষড়যন্ত্র বলে টাকা বন্ধ করে দিলো।