শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: করোনাসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বাজারকে বিকশিত ও গতিশীল করতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছে। এসব দাবির মধ্যে: পুঁজিবাজারে টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করার দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছে প্রতিষ্ঠান‌টি।

সোমবার (১৩ জুন) ডিএসইতে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর দুজন পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ডিএসইর একগুচ্ছ দাবির মধ্যে অন্যতম ৬ দা‌বি হলো:

বন্ড বাজার সম্প্রসারণ : একটি স্বতন্ত্র বন্ড মার্কেট তৈরীর জন্য রেগুলেটরী এবং টেকনোলজিক্যাল কাঠামো সম্পূর্ণরূপে তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কর্পোরেট বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট। ডিএসই মনে করে একটি সময়োগযোগী নীতি সহায়তার মাধ্যমে কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরী করা গেলে দেশের শেয়ারবাজার তথা সমগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে। সে জন্য জিরো কূপন বন্ডের মতো সকল প্রকার কর্পোরেট বন্ডের উদ্ভূত সুদ বিনিয়োগকারী নির্বিশেষে কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছে ডিএসই।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান : কর্পোরেট করহার হ্রাস প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে ঐ তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। শেয়ারবাজারের টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান নূন্যতম ১০% করার প্রস্তাব করেছে ডিএসই।

ডি‌ভি‌ডে‌ন্ডের করমুক্ত সীমা বৃদ্ধিকরণ : শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিযোগকারীদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে করমুক্ত ডি‌ভি‌ডে‌ন্ডের সীমা ৫০,০০০ থেকে নূন্যতম ১০০,০০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে ডিএসই। পাশাপাশি ডি‌ভি‌ডে‌ন্ড থেকে উৎসে কর চুড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটি।

এসএমই বোর্ডে কোম্পানির করহার হ্রাসকরণ : ২০২১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এসএমই বোর্ড নামে একটি পৃথক বোর্ড চালু হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন যোগান ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্স উন্নতরণ। এই বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য নূন্যতম ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০% হারে কর ধার্য্য করার দাবি জানিয়েছে ডিএসই।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ডি‌ভি‌ডেন্ড আয়ের উপর কর হ্রাস :কোম্পানিগুলো কর পরবর্তী মুনাফা থেকে ডি‌ভি‌ডেন্ড প্রদান করে। ডি‌ভি‌ডেন্ড আয়ের উপর কর প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত কর। এজন্য কর্পোরেট শেয়ারহোল্ডারদের ডি‌ভি‌ডেন্ড আয়ের উপর কর ২০% থেকে হ্রাস করে ১০% করার প্রস্তাব করেছে ডিএসই। একই সাথে কর্পোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের উপর চুড়ান্ত করহার ১০% করার দাবি করেছে।

স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাস : শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্রোকারেজ হাউজকে ন্যয়সগত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যমান অযৌক্তিক করনীতি থেকে অবমুক্তি দিয়ে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ (পূর্বে এটি ০.০১২৫ শতাংশ ছিল) করতে অথবা আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক নিয়মিত হারে আয়কর প্রদানের আদেশ জারী ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ডিএসই।

দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম হলো দেশের শেয়ারবাজার। তাই “কোভিডের ধকল পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন” শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটকে দেশের শেয়ারবাজারই সরকারের কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে ডিএসই মনে করে।