শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানি ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ ও ম্যাক এন্টারপ্রাইজকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মুলত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোম্পানি দুটোকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।

কোম্পানি দুইটির পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে এমন পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ ও ম্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

তথ্য মতে, ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে বিএসইসি জানিয়েছে; কোম্পানিটিকে শিগগিরই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) বা এসএমই প্লাটফর্মে স্থানান্তর করতে হবে। এতে কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ আইন অনুসরণ করে পুঁজিবাজার থেকে আরও মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ পাবে। আর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন দেবে কমিশন।

অন্যদিকে, ম্যাক এন্টারপ্রাইজের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে বিএসইসি জানিয়েছে; অন্যথায় কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করতে সক্ষম এবং ইচ্ছুক- এমন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। অন্যথায় কোম্পানিটিকে পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ নিষ্পত্তি করে পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। তবে আর্থিক অবস্থা বিবেচনা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ ও ম্যাক এন্টারপ্রাইজকে একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।

গত ২৫ মে বিএসইসির কার্যালয়ে ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ ও ম্যাক এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ ও ম্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম. এ. কাসেম, ম্যাক এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কাসেম আজম এবং উভয় কোম্পানির দায়িত্বরত কোম্পানি সচিব আকতার হুমায়ুন কিরণ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ সময় বঞ্চিত করার সুযোগ নেই এবং বর্তমান কমিশন এ বিষয়ে খুবই অনমনীয়। তাই কমিশন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ওটিসি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। যারা কোম্পানি পরিচালনায় অক্ষম তাদেরকে কোম্পানিটি বিক্রি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওটিসির কোম্পানিগুলোকে জানানো হয়েছে, ওটিসি মার্কেট বলে কিছু থাকবে না। তাই ওটিসির বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর কেবল তিনটি বিকল্প পথ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত কোম্পানিগুলো এটিবি/এসএমই মার্কেটে স্থানান্তরিত হওয়া, দ্বিতীয়ত সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ নিষ্পত্তি করা এবং তৃতীয়ত কোম্পানিটিকে বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ: বর্তমানে কোম্পানিটি সামান্য লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি কাগজপত্র পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে বাদামী কাগজ উৎপাদন করে। নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে কোম্পানির মোট জমির পরিমাণ ২.৬১ একর। কোম্পানিটির লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাসও খুবই হতাশাজনক। কোম্পানিটির ২ থেকে ৩ বছরের কার্যক্রম চলার পরে হঠাৎ করে বিক্রিতে ধস নামে। এরপর থেকে ম্যাক পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ উৎপাদন ১৪ মাস বন্ধ থাকে। এই বন্ধের ফলে তাদের যন্ত্রপাতির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

কোম্পানির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ টন। এতে করেও কোম্পানিটি পণ্যের বর্তমান বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারে না কারণ বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। গ্যাস বিলের কোনও বকেয়া নেই প্রতিষ্ঠানটির। তবে সোনালী ব্যাংকের সাথে ম্যাক এন্টারপ্রাইজের (ম্যাগ পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ সিস্টার কনসার্ন) একটি ঋণ সংক্রান্ত মুলতুবি মামলা রয়েছে। বিষয়টি কোম্পানিটির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বড় বাধা। এ কারণে কোম্পানিটি কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর ঋণ পাচ্ছে না।

ম্যাক এন্টারপ্রাইজ: কোম্পানিটি ১৯৭৪ সালে ব্যবসা শুরু করে। শুরুতে কোম্পানিটি বেশ সফল ছিল। তবে ১৯৮৮ সালের বন্যায় কোম্পানির সমস্ত যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে যন্ত্রপাতি উদ্ধার মূল্যে বিক্রি করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ (বাংলাদেশ) কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের ফলে কোম্পানির কারখানার এলাকা ২.৪০৫ একর থেকে ২২ ডেসিম্যালে নেমে আসে। কোম্পানিটি এই দুটি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দায়ের করেছে, যা বিচারাধীন রয়েছে।

বর্তমানে, কোম্পানির কোনও বিল্ডিং/ফ্যাক্টরি অবকাঠামো বা যন্ত্রপাতি নেই। ম্যাক এন্টারপ্রাইজ শেয়ারহোল্ডারদের কোনও লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সোনালী ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়ে কোম্পানির মামলা মুলতুবি রয়েছে। তবে কোম্পানিটি খুব শিগগিরই ঋণ নিষ্পত্তি করবে বলে আশাবাদী। কোম্পানিটি অস্তিত্ব এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে। কারণ কোম্পানিটির কাছে ২২ ডেসিম্যাল ভূমি ছাড়া আর কিছুই নেই।

তবে কোম্পানিটির পরিচালকরা জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক তাদের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রিট পিটিশনের চূড়ান্ত রায় না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সময় প্রয়োজন।