শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: টেকসই ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজারের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০ হাজার কোটি টাকার ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’ বা ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠন করেছে। গঠিত এই ফান্ড বা ফান্ডের টাকা নিয়ে কোন বিতর্কের সূযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য গঠন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তাদের অদাবিকৃত বা অবণ্টিত ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ ওই ফান্ডে জমা দিচ্ছে। ফলে এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ নেই।মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলের ব্যবহার নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ড. শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলেছে, সেটা তাদের আরও ব্যাখ্যা করার জন্য বলা হয়েছে। এখানে মূল বিষয় দুটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী অদাবিকৃত টাকা ১০ বছর পর বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে। এতে পরে ওই টাকার মালিকানা দাবি করার সুযোগ থাকে না। সেই হিসেবে আমাদের পরিকল্পনা পুরোপুরি ভিন্ন।

স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অদাবিতকৃত বা অবণ্টিত বা এ সম্পর্কিত যত ধরনের জিনিস নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা অনন্তকাল ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি মালিকের মৃত্যুর পরও তার ওয়ারিশ ওই টাকা যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে বুঝে নিতে পারবেন। আর ওই ফান্ড ব্যবহারের মাধ্যমে যদি মুনাফা আসে, সেটিও পাবেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো আমরা ফান্ডটি বাজেয়াপ্ত করছি না। যদি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো অদাবিতকৃত শেয়ার বা অর্থ বাজেয়াপ্ত করতাম তাহলে সাংঘর্ষিক বলার সুযোগ থাকতো বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘অমরা অদাবিতকৃত শেয়ার বা অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে ভিন্নভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। এতে ওই অর্থের ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপদ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্বতন্ত্র পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আর তার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিএসইসি কাজ করবে। ফলে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই বললেই চলে।

ড. শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের পর্ষদ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকসহ সব কোম্পানি স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিচ্ছে। ফান্ডটি ব্যবহারে যথাযথ ভাবে কাজ চলছে। এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আমরা এ কাজটি করছি।

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির সমন্বয় ও সংযোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আরও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি।’

এর আগে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গঠন করা হয়েছে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস,। তবে এই ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ফান্ড দিতে না রাজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার দেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে এই দাবী উপস্থাপন করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তবে এই বিষয়ে সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ভালো সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করছে বিএসইসি।

বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরসহ চারজন ডেপুটি গভর্নর, বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, এনজিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্র্যাডিট রেগুলেটরি অথরিটি(এমআরএ) প্রতিনিধি, বিটিআরসি প্রতিনিধি, সমবায় অধিদফতরের প্রতিনিধি, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্টস্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসসহ (আরজেএসসি) প্রতিনিধিসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসইসির অনেক রেগুলেশন কোম্পানি আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে ওই জায়গায় বিএসইসির আইন পরিপালন করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এদের প্রধান রেগুলেটর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ বিএসইসির রেগুলেশন অনুযায়ী পুঞ্জিভূত লোকসানি প্রতিষ্ঠান বর্তমান বছরের আয় দিয়ে লভ্যাংশ দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পনি আইন অনুযায়ী তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটাই তারা বাস্তবায়ন করতে চায়।