শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: শেয়ারবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চারটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৫৪ অনুযায়ী যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নেতৃত্বে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্যান্য সংস্থার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এ যৌথ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটিতে বিএসইসির আরো দুজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। তারা হলেন-বিএসইসির পরিচালক আবু রায়হান মোহাম্মদ মুতাসীম বিল্লাহ ও উপ-পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে নিরীক্ষা ও বিশেষ নিরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং পুঁজিবাজার সম্পর্কিত অপরাধ সংগঠনের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। তাই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে আরো যাচাই-বাচাই করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। এরই ধরাবাহিকতায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৫৪ অনুযায়ী যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে বেশি কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

চলতি বছরের গত ২৮ জুন কোম্পানির একজন উদ্যোক্তা পরিচালকসহ আরও বেশ কয়েকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে বিএসইসি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। গঠিত তদন্ত কমিটিতে ছিলেন সহকারী পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ ও মো. সিরাজুল ইসলাম। তদন্ত কার্যক্রমে গঠিত কমিটি বেশ কিছু অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চিহ্নিত করেছে। এর আগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পায় বিএসইসি।

প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এক প্রভাবশালী পরিচালককে আর্থিক সুবিধা দিতে গিয়ে কোম্পানির স্থায়ী আমানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোম্পানির কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানির স্থায়ী আমানত ছিল ১ হাজার ৪৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা নেমে এমেছে ২৫১ কোটি টাকায়। আর ২০১৯ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়কালে, কোম্পানির মোট জীবন বিমা পলিসি ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা থেকে ৬৩ কোটি টাকা কমেছে। এছাড়া আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের দাবি যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না কোম্পানিটি। এতে করে কোম্পানির গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি জীবন বিমা পলিসিও কমে গেছে। একইসঙ্গে ফারইস্ট লাইফের বিনিয়োগের পরিমাণও কমেছে।

শেয়ারবাজারে ২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩০.৫৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১.২২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.৮১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৭.৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত ১৯ আগস্ট কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৬০.৪০ টাকায়।