শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মুনাফায় ফেরাতে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকদের নেতৃত্বে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে । কোম্পানি তিনটি হচ্ছে- ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেড ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিডি লিমিটেড।

রোববার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানিগুলোকে পরিচালক নিয়োগের চিঠি দেয়া হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালকদের নেতৃত্বে পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন পর্ষদে বর্তমান পরিচালকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগের পরিচালকদের শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লক করা হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানি স্থায়ী সম্পদ ও আমানত বন্ধক দিতে পারবে না। এ সম্পদ দেখিয়ে ঋণও নিতে পারবে না। নতুন পর্ষদ যাতে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কোম্পানি পরিচালনা করতে পারে সে লক্ষ্যে কোম্পানির আর্থিক দায় ও ঋণ খেলাপি দায় তাদের ওপর বর্তাবে না।

সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল: সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৫ সালে। দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় কোম্পানির উৎপাদন। আট বছর আগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে চমক দেখায় ফ্যামিলি টেক্স। পরে ঘোষণা না দিয়ে প্রায় সব শেয়ার বেচে দেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

বর্তমানে নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথের নেতৃত্বে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল লিমিটেডের নতুন পর্ষদ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ২০১৭ সাল থেকে লোকসানে মুখে পড়ে। কোম্পানিটিও তালিকাভুক্তির পর থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

বর্তমানে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে কোম্পানির মোট ২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরিচালকরা হলেন- নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ, মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ, এবিএম শহিদুল ইসলাম, বিএম আশরাফুজ্জামান, তৌফিক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহসান।

ফ্যামিলিটেক্স বিডি : আট বছর আগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে চমক দেখায় এই কোম্পানিটি। ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৭ টাকা ২৬ পয়সা। শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ছিল ২১ টাকা ৭২ পয়সা।

কিন্তু এর পর থেকে কোম্পানিটির অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। ২০১৪ সালের জন্য কোম্পানিটি ১০ শতাংশ এবং পরের তিন বছর পাঁচ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এরপর থেকে লোকসানের জন্য আর কোনো লভ্যাংশই দেয়নি। গত বছর কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১৫ পয়সা করে লোকসান দেয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিক অর্থাৎ ছয় মাসে লোকসান দিয়েছে ১৩ পয়সার কিছু বেশি।

কাজী আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০১৩ সালে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ফ্যামিলিটেক্স বিডির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিতে ৬জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ চার বছর লোকসান করেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে কখনও নগদ লভ্যাংশ দেয়নি।

২০১৬ সালে কোম্পানিটি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ এবং চেয়ারম্যান রোকসানা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পর থেকে কোম্পানিটি লোকসানে চলে আসে। কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটালের ৪ দশমিক ২ শতাংশের নিচে চলে আসে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারধারণের পরিমাণ।

পরিচালকরা হলেন-কাজী আমিনুল ইসলাম, ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান এবং ড. মো. ফরজ আলী। এ ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজী আমিনুল ইসলাম। ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার ২ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে- ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।

পুনর্গঠিত পর্ষদে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা পুনরায় পরিচালক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। ওই নির্দেশনার আলোকেই কোম্পানিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। এর অংশ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।

২০১০ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে আর থাকছেন না তাসবিরুল আলম চৌধুরী। তাকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাজী ওয়াহিদুল আলমকে। ওয়াহিদুলের এভিয়েশন ব্যবসায় বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পর্যটন ও এভিয়েশন বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

কাজী ওয়াহিদ-উল-আলমের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকার পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ না দেওয়া এ কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূন্যতম ৫ শতাংশ শেয়ার নেই। তাই কোম্পানিটিতে কাজী ওয়াহিদ-উল-আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মো. মাকসুদুর রহমান সরকার, ইটএম নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক বদরুজ্জামান ভুঁইয়া, মোহাম্মদ ইউনুস এবং মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।