শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  অদৃশ্য কারণে বন্ধ ছিল নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন। তবে আনন্দের খবর হচ্ছে, আবারও নতুন কোম্পানির আইপিওতে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসই)। সম্প্রতি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিডিং সম্পন্ন হয়েছে। বিডিংয়ে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১৫ টাকা। নিলামের মাধ্যমে কোম্পানিটির এই কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ভালো মানের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন হলে পুঁজিবাজারের গতি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানের দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আইপিও অনুমোদন জরুরি হয়ে পড়েছে। খুব শিগগিরই কোম্পানিটির লেনদেনে আসা উচিত বলে মনে করেন তারা।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতে, নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদনে বাংলাদেশে দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। এতে করে নতুন কোম্পানি এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই কোম্পানিগুলো যেন দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে সেজন্য বিএসইসিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। খুব অল্প সময়েই নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া উচিত। ওয়ালটন দেশীয় ইলেকট্রনিক্স খাতের বড় কোম্পানি। কোম্পানিটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পুঁজিবাজারে আসলে কোম্পানিটি দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রোড শো সম্পন্ন করে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। রোড-শো তে যোগ্য বিনিয়োগকারী (ইলিজিবল ইনভেস্টর) হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার ও তাদের পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও ফান্ডের ম্যানেজার এবং কমিশন অনুমোদিত বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করে। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। আর এই অর্থ কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর ব্যয় মেটাতে কাজে লাগানো হবে।

সর্বশেষ ৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির ভারিত গড় হিসাবে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২৮ টাকা ৪২ পয়সা। আর ৩০ জুন, ২০১৯ তারিখে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (পুনর্মুল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) ছিল ২৪৩ টাকা ১৬ পয়সা। আর পুনর্মুল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৩৮ টাকা ৫৩ পয়সা। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে আছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় এক দশক ধরে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি তেমন আসেনি। ফলে, বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব তৈরি হয়েছে। তবে, বহুদিন পরে ওয়ালটনের মতো ভালো ও শক্তিশালী অ্যাসেট বেজড কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য স্টকহোল্ডারদের ব্যাপক আগ্রহী করে তুলেছে। তাদের বিশ্বাস- ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মতো ভালো ইস্যু বাজারের উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট কেটে স্বস্তি ফিরে আসবে। সেই সঙ্গে বাজারও কিছুটা চাঙ্গা হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, ওয়ালটন একটি ভালো কোম্পানি। তারা লিস্টিং প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ওয়ালটন শেয়ার বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে। ফলে বাজারও চাঙ্গা হবে তিনি আশাবাদী।

হাফিজ জানান, যে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে ভালো শেয়ার থাকা দরকার। অন্যথায় সেই শেয়ার বাজার কখনই উন্নতি করতে পারে না। আমাদের স্টক মার্কেটে ভালো শেয়ারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। তাই, ওয়ালটনের মতো বড় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর ইস্যু বাজারে আসা দরকার।

তিনি বলেন, “আমরা সবাই শুধু বলি- এসব কোম্পানি বাজারে আসা দরকার। কিন্তু, তাদেরকে আনার জন্য কোনো বন্দোবস্ত করি না। ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানি বাজারে আসলে তাদের শেয়ারের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্বনিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

ভালো শেয়ার যদি বাজারে না আসে, বাজার তার লক্ষ্যে কখনোই পৌঁছতে পারবে না বলে জানান বিএমবিএ’র এই সাবেক সভাপতি ও ট্রিপল এ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক।

ইনভেস্টমন্টে করপোরেশন অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানির শেয়ার এলে বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। শেয়ারবাজার ঘুরে দাড়াবে বলে ধারণা করছি।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ালটনের টার্নওভার বেশি। ইপিএস, পিই রেশিও বেশ ভালো। সার্বিকভাবে ওয়ালটন ভালো কোম্পানি। তারা বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।