শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজার চাঙ্গাভাবের পুর্বাভাস দেখা গেছে। গত কয়েক কার্যদিবস পুঁজিবাজারে সুচকের উঠানামার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হচ্ছে। বর্তমান পুঁজিবাজার একটানা সূচক বাড়ছে না, তেমনি একটানা সূচক কমছে না। এটা স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের পুর্বাভাস বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। এক দিন সংশোধনের পর পুঁজিবাজার ফের ইতিবাচক গতিতে ফিরেছে। লেনদেনের প্রথমার্ধে বিক্রির চাপ থাকলেও শেষার্ধে কেনার চাপ বেড়ে যায়। সূচক ও বেশিরভাগ শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন কিছুটা কমেছে।

তবে ঈদের ছুটির আগে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় লেনদেন কমাটাই ছিল স্বাভাবিক। শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের ইতিবাচক গতি ঈদের পরে বাজার ভালো হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগের দিনে ব্যাংক ও আর্থিক খাত ইতিবাচক ছিল, কিন্তু বাকি খাতগুলোতে দরপতন হয়। গতকাল এ দুই খাতসহ প্রায় বৃহৎ সব খাতে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতগুলোও তুলনামূলক ভালো অবস্থানে ছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে বলছেন, গত দু-এক সপ্তাহ থেকে তলানিতে থাকা পুঁজিবাজার কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। তবে ঈদের আগে সাধারণত বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে যায় বলে লেনদেন কম হয়।তাছাড়া সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামুখী পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরতে শুরু করছে। তেমনি জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর বেশকিছু কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করার প্রক্রিয়ায়। কোম্পানিগুলোর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাজার চাঙা থাকার সম্ভাবনাই ছড়াবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যা পুঁজিবাজার চিত্র পাল্টে দেবে বলেও মনে করছেন তারা।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, ঈদের পর বাজার আবার শুরু হবে নতুন উদ্যোমে। এ বছর ঈদের আগে বাজারে তেমন কোনো চমক না থাকলেও শেষ দিকে বাজার হতাশ করেনি বিনিয়োগকারীদের। সার্বিক লেনদেন কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ দিনই তা সন্তোষজনক ছিল। আর শেষের দিকে সূচক বৃদ্ধি অনেকটা ইতিবাচক। বাজারের বর্তমান আচরণ ইঙ্গিত দিচ্ছে ঈদের পরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বিনিয়োগকারীরাও ছুটি কাটিয়ে নতুন উদ্যোমে লেনদেনে ফিরবেন। ফলে ঈদের পর বাজার চাঙ্গা থাকার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান বলেও মনে করছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। কারন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর কাছাকাছি। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলে দায়িত্ব তাদের বাড়ে।

কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিনিয়োগকারীদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব তাদের। তবে কিছু কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরপরই বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত হয়। তাদের এমন দায়িত্বহীন আচরণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। তাই এমন কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলছেন, যে কোন জিনিষের খারাপ সময় বেশি দিন থাকে না। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটও অনেকটা কেটে যাচ্ছে। কারণ ২০১০ এর পর থেকে যে সংস্কারের দরকার ছিল তা অনেক হয়েছে। বর্তমানে বাজারে দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারলে প্রফিট সংগ্রহ করা খুবই সহজ। তবে অনেকেই ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করেন। যখন সময় এবং শেয়ার দর সঙ্গতিপূর্ণ হবে না তখন ভুল হবেই। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সুতরাং সময় এবং পণ্যের দর বিচার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে পারলে পুঁজিবাজার থেকে লোকসান হওয়ার কোনো সুযোগ এক সময় আর থাকবেনা।

বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগর উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যা প্রত্যাশা করে, তার সঙ্গে প্রাপ্তি কখনোই মিলে না। কারণ সব সময়ই আমরা সহ বিনিয়োগকারীরা যা প্রত্যাশা করি তা ঘটে না। আবার অনেক সময় কিছু প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে পরিণত হয়। তাছাড়া পুঁজিবাজারের মেঘলা আকাশ খুব শিগরিই কেটে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ খারাপ সময়ও বেশি দিন থাকে না।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, সরকার অনেক চেষ্টা করেছে; নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক চেষ্টা করেছে। বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আমরা আশা করি ঈদের ছুটির পর বাজার আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াবে।

বাজার বিশ্লেষক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলছেন, ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজার ভালো হবে।বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।এমন আশায় কেনার চাহিদা বাড়ায় বাজার চাঙ্গা হয়েছে। বিনিয়োগকারী সব সময় ভালো শেয়ারের সঙ্গে থাকতে চান। সার্বিক বিবেচনায় এখনও অধিকাংশ ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশ বিরাজ করছে। সা¤প্রতিক দরপতনে এসব শেয়ারের দর কমে গেছে। হয়তো সে কারণেই ব্যাংক শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে পিপল লিজিং নিয়ে ভয়-ভীতি ছিল যে, পিপল লিজিং কে অবসায়ন করার ফলে পুঁজিবাজারে বড় একটা চাপ পড়বে সেটাও কেটেছে।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পুঁজিবাজার অনেক কমে গিয়েছিল ।সব কমারইতো একটা লিমিট আছে। তাই এখন শেয়ারের দাম বাড়ছে। ঈদের ছুটির পরও বাজারের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।