শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার বিনিয়োগে সুখবর আসছে। বাজেট ঘোষণার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জনগণ সুফল না পেলেও অল্প দিনের মধ্যেই সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র, পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে। সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা এবংজমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আবাসন খাতের জন্য সু-খবর আসছে।

এদিকে পুঁজিবাজারের চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে তুলতে কার্যকরি উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ি বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে, সেসব ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে সোমবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২০টিরও বেশি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর প্রায় ২-৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। ওইসব ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, কিছুদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে যোগাযোগ করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য বলা হচ্ছে।

এর আগে গত ১৬ মে দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত বিনিয়োগ সীমা সমাধানে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলক্ষ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা থেকে অতালিকাভুক্ত ( ইক্যুইটি শেয়ার, নন-কনভার্টঅ্যাবল প্রিফারেন্স শেয়ার, নন-কনভার্টঅ্যাবল বন্ড, ডিবেঞ্চার, ওপেন-ইন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড) সিকিউরিটিজকে বাদ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে শেয়ারবাজারে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা বাড়ে।

বাজেট ঘোষণার পর এসব নির্দেশনা দিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান; দেশে ফিরে এসে দেখেন এ সবের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সঞ্চয়পত্রে লভ্যাংশের ওপর ৫ শতাংশ, পুঁজিবাজারের স্টক ডেভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ‘সবার জন্য আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন’ বাস্তবায়নে জমি রেজিস্ট্রি ফি কমানোর যে কথা বলেছেন সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি।

পুঁজিবাজারে আস্থাহীণতা বিরাজ করছে। ফলে আশাহত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অর্থমন্ত্রীরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। সাধারণভাবে দায়ভার অর্থমন্ত্রীরও। যদিও চিকিৎসা শেষে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

চলতি অর্থবছর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিক্ষিত এই বাজেটে কাউকে বিপদে ফেলবেন না, অসন্তুষ্ট করবেন না বা হয়রানি করবেন না এমন প্রত্যয় করেছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এক ডেঙ্গু জ্বর সবকিছু বুমেরা করে দিয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় অনেক কিছু সংশোধন করতে না পারলেও চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বার্থে কিছু কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নিবেন এমন আশা করেছিলেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে জনস্বার্থে কিছু কিছু বিষয়কে সংযোজন-বিয়োজন করতে বলেছিলেন।

এর মধ্যে ছিল- বাজেটে স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে উদ্ধুদ্ধ করতে এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর দেয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাদ দেয়ার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বার্থে অর্থমন্ত্রীর এসব কথার প্রতিফলন ঘটেনি।

এখানেই শেষ নয়; ‘সবার জন্য আবাসন কেউ থাকবে না গৃহহীন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রথম বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আবাসন খাতের জন্য সু-খবর নিয়ে এসেছেন। এতে একদিকে ফ্ল্যাটের ব্যবসা যেমন বাড়বে তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও স্বস্তি পাবেন। মিথ্যা তথ্য দিয়েও জমি ক্রয় বন্ধ হবে।

সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। কিন্তু এখনো জনস্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এনবিআর থেকে ভূমি অফিসে এখনো এ ধরনের কোনো সার্কুলার জারি করা হয়নি। আর যে কারণে আগের নিয়মেই চলছে জমি রেজিস্ট্রেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ থেকে সকলেরই আশা ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নতুন আরোপিত উৎসে কর এবং স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর দেয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাদ দেয়া হবে। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে তা উপেক্ষিতই থেকেছে।

তাই সঞ্চয়পত্রে নতুন আরোপিত উৎসে কর এবং স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ধার্যকৃত কর বাদ দেয়ার কথা বলেন তারা। এছাড়াও বাজেটে জনস্বার্থে জমি রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আনা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুঁজিবাবজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সবসময়ই অত্যন্ত স্পষ্ট ও আন্তরিক। এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্বও দিয়েছেন। এটিকে ভালো করতে হবে, বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে, অংশগ্রহণমূলক করতে হবে এবং এর গভীরতা বাড়াতে হবে। বাজেটের আগেও তিনি একাধিকবার বিনিয়োগকারীদেরকে তার উপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। আর যে কারণে পুঁজিবাজারে আস্থার সঙ্কট চলছে।

অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠনের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, জনস্বার্থে নেয়া অর্থমন্ত্রীর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। মানুষ উৎসাহ পাবে। পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতে আস্থা ফিরবে। তিনি বলেন, বাজেটে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশে ও স্টক ডেভিডেন্ডে কর বসানোর বিষয়টি অমানবিক। ব্যবসায়ীদের অনুকূলে বাজেটে যত সুবিধা দেয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের স্বার্থে নেয়া অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা ভাবা যায় না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সবসময়ই অত্যন্ত স্পষ্ট ও আন্তরিক। কিন্তু স্টক ডিভিডেন্ড দিলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর বিষয়টিতে অর্থমন্ত্রীর ছাড় দেয়া উচিত ছিল। কারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে উৎসাহ দিতে হবে।

ভালো ডিভিডেন্ডের সঙ্গে শেয়ারবাজারের ভালো হওয়া বা মন্দ হওয়া সম্পর্কিত। পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে বিনিয়োগের জন্য অর্থের অভাব হবে না। আশা করি, বাজেটে যেসব বিষয় শেয়ারবাজারের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে, সেগুলো অর্থমন্ত্রী প্রত্যাহার করে নেবেন।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, কোম্পানির স্টক ডিভিডেন্ডে ১৫ শতাংশ কর পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাদ দিতে হবে। এটা শেয়ারবাজারের জন্য নেতিবাচক। একই সঙ্গে বাজেটের পর থেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে এই কর প্রত্যাহার করা দরকার।