শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে দেশের পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে। ফলে তলানীতে যাওয়া পুঁজিবাজারে লেনদেন ১৪ শত কোটি টাকার বেশি ছাড়ায়। তবে সেপ্টেম্বরের শুরুতেও সূচকের গতি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও হঠাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঠানো এক চিঠিতে লন্ডভন্ড করে দেয় পুঁজিবাজার।

যার ফলে ১৪ শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন ৫০০ শত কোটি ঘরে চলে আসে। তবে এনবিআরের সেই বিতর্কিত চিঠি ঘিরে যে ধাক্কা বাজারকে নিচে নামিয়ে দিয়েছিল, সেই জট কাটতেই বিনিয়োগকারীরা নতুন করে পুঁজিবাজার নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করছে।

এর ফলে গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবস সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত ডিএসইতে গত ৯ কার্যদিবসে ৪৫৪ পয়েন্ট সূচকের দরপতন পর গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে ৭৭ পয়েন্ট সূচকের উত্থান হয়েছে। এর ফলে নতুন করে আশার আলো দেখছে বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি বাজারে স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা পুরোদমে লেনদেন শুরু করেছিলেন এবং অনেকেই লোকসান কাটিয়ে মুনাফা তুলতে শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কাছে একটি বিতর্কিত চিঠি ইস্যু হয়। ওই চিঠিকে কেন্দ্র করে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন থেকে বিরত হতে শুরু করেন এবং টানা পতনের কবলে পড়ে যায় পুঁজিবাজার।

তবে স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এনবিআর তাদের সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। ফলে বাজারে আবারও ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করছে। তবে সপ্তাহে শেষ তিন কার্যদিবস সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহ জুড়ে সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ ও বাজার মূলধন কমেছে।

এতে ডিএসইর গড় লেনদেন কমেছে ১৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা। তবে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা কমলেও সিএসইতে বেড়েছে। এর ফলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৯৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা কমেছে। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৫৮৬ কোটি ৪৯ লাখ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৭১ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ১০৩ পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৫ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৯টির, দর কমেছে ২১৯ টির এবং ৩৭টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

তবে সপ্তাহজুড়ে শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার ২০০ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ২৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৮১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

ফলে সপ্তাহজুড়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা।