মো: আবুল খায়ের( হিরু): কোভিড -১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার মানুষকে ঘরে রাখতে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে শিল্প কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধসহ নানারূপ পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।আর এ কারনে বিশ্বজুড়েই সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পরেছে।পৃথিবী সৃষ্টির পর বিভিন্ন সমযে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা জটিল রোগ ,প্রাকৃতিক দুর্যোগ,যুদ্ধ-বিগ্রহ,প্রলয়,আগ্নেয়গিরির জন্য সৃষ্ঠ মহামারী মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন করেছে ।

তবে একসাথে পৃথিবীতে মহাবিপর্যয় এসেছে প্রতি শত বছরে এক বার করে যেমন ১৯১৯-২০ এ স্পেনিশ ফ্লু,১৭২০ সালে প্লেগ ও ২০১৯-২০ এ কোভিড -১৯ ।এই মহামারীর দরুন সৃষ্ঠ দুর্যোগ পৃথিবীর অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ উলট পালট করে দিয়েছে।বর্তমান বিশ্বের খাদ্য ব্যবস্থাপনা চেইন করোনার কারনে ভেঙ্গে পরেছে।

পুর্বের সকল দুর্ভিক্ষের সময় বিশ্বের কোথাও কোথাও এই খাদ্য চেইন ঠিক থাকা স্বত্বেও খাদ্য নিরাপওা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নাই।করোনা পরবর্তী ভঙ্গুর সাপ্লাই চেইন এর কারনে বিশ্বের এই বিশাল জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পুরন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ ।তাই পৃথিবীতে দেখা দিবে খাদ্য ঘাটতি ও দুর্ভিক্ষ।

পুরো পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭৭৭কোটিরও অধিক।অন্যদিকে জাতিসংঘের হিসাব মতে, বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ সমবায়ের মাধ্যমে তাহাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে থাকে। তন্মধ্যে কানাডা, জাপান ও নরওয়েতে প্রতি ৩ জনে একজন সমবায়ী। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে প্রতি ৪ জনে একজন সরাসরি যুক্ত সমবায়ের সহিত। জাপানে কৃষিকাজে নিয়োজিতদের ৯০ শতাংশ সমবায়ী। ইহাছাড়া গণচীন, ভারত ও মালয়েশিয়ার জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশ সমবায়ী।বর্তমানে বাংলাদেশে মোট সমবায়ীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ।

মোটকথা, ধনী-গরীব সকল দেশে সমবায় সমিতির সাফল্যগাথা নজিরবিহীন।বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদগণ বিশ্বাস করেন একটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপওা,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের বিপর্যয় রোধ করনে অন্যতম পরীক্ষিত পদ্ধতি হচ্ছে সমবায়ী উদ্যোগ। ইহার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নূতন নূতন উদ্যোক্তা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ।বর্তমানে আমাদের দেশে ২৯ ধরনের নিবন্ধিত প্রায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার সমবায় সমিতি বিদ্যমান। তন্মধ্যে কৃষি, মৎস্য ও পশু পালন, গৃহায়ন, পরিবহন, দুগ্ধ উৎপাদনও বিপনন, সঞ্চয় এবং ক্ষুদ্রঋণ অন্যতম।

করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে কিন্তু এতে খাদ্য নিরাপওা নিশ্চিত হবে এমন নিশ্চয়তা নেই।উন্নত দেশগুলোর প্রনোদনা প্যাকেজ যথাযথ বাস্তবায়ন হলেও ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশসমুহের প্যাকেজ বাস্তবায়ন বিভিন্ন চ্যালেন্জের সম্মুখীন হবে ।তাই এ সকল দেশের প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে নিবন্ধিত সমবায় প্রতিষ্ঠানসমুহ।

বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন দেশগুলোর একটি ।এই দেশের ১৬.৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১.২ কোটি জনসংখ্যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে আর তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস খাতের আয়ের মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে ।করোনা পরবর্তী রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস সেক্টরের আয় কমে গেলে এ প্রবৃদ্ধি নিম্মগামী হবে ।এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক প্রবাসী বাংলীদেশী চাকুরী হারিয়ে দেশে চলে আসবে ।

এসকল প্রবাসী ও গার্মেন্টসের চাকুরী হারানো জনগনকে কাজে লাগানোর জন্য সমবায় হতে পারে অন্যতম প্রধান মাধ্যম । সরকার এ সকল প্রবাসীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি গঠন করে ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের লব্ধকৃত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উন্নত বিশ্বের কৃষি ব্যবস্খাপনা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারে ।

এতে করে সরকারের খাদ্য নিরাপওা নিশ্চিত হবে এবং খাদ্য আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে । সরকার ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছর আউশ ধানের উৎপাদন বাড়াতে এক লাখ ৯ হাজার ২৬৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাসায়নিক সার ও বীজ দেবে ।

প্রত্যেক কৃষক ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি করে ডিএপি সার এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার পাবেন।প্রত্যেক কৃষককে ৫ কেজি বীজ বাবদ ৩০০ টাকা, ২০ কেজি ডিএপি সারের জন্য ২৮০ টাকা, ১০ কেজি এমওপি সারের জন্য ১৩০ টাকা, এসব উপকরণ পরিবহনের জন্য ১০৫ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ৩৫ টাকা ধরে মোট ৮৫০ টাকা করে দেওয়া হবে।এই বীজ ও সার বিতরনে সরকারকে নানা ঝামেলা পোহাতে হবে।সরকারের উচিত এই সার ও বীজ বিতরনে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সহায়তা গ্রহন করা ।

বর্তমানে দেশে প্রায় ১.৭৭ লক্ষ সমবায় প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান ।এ সকল সমবায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা কার্যকর সমবায় প্রতিষ্ঠান তাদের মাধ্যমে এ কঠিন কাজটি করা অনেক সহজ হবে ।এ কঠিন কাজটি আরো সহজ করার জন্য যৌথভাব কৃষি মন্ত্রনালয় ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ উদ্দ্যোগ গ্রহন করতে পারে।তাতে করে সরকারের যে খাদ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা তা সহজে অর্জন সম্ভব হবে এবং আমাদের খাদ্য নিরাপওার প্রধান হাতিয়ার ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।

এমনিভাবে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী যেমন:গম,ভুট্রা, ডাল,পেয়াজ,রসুন,আদাসহ অন্যান্ন খাদ্যসামগ্রী যেগুলো আমরা এখন আমদানীর মাধ্যমে আমাদের চাহিদা পুরন করে থাকি তা যদি এই সকল সমবায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে উৎপাদন করতে পারি তাহলে আমাদের আমদানী ব্যয় কমবে এবং আমাদের খাদ্য ঘাটতি রোধ করতে সহায়তা প্রদান করবে।

এছাড়াও দেশের মোট আবাদযোগ্য ৮৫.৭৭ লক্ষ হেক্টর জমির খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের ৪৫৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ভিওিক খাদ্য উৎপাদনূখী সমবায় সমিতি গঠন করে তাদের মাঝে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি উপকরন বিতরন ও সহজ শর্তে ঋন প্রদানের ব্যবস্থা করলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন সমস্যা সহজে সমাধান করা যাবে ।ঐ সকল সমবায় সমিতিগুলোর মালিকানায় থাকবে ঐ ইউনিয়নের সকল ভোটার ।

এতে করে ঐ ইউনিয়নের আয়-বৈসম্য দুর করা সহজ হবে আর এ কাজটি সঠিকভাবে করতে না পারলে করোনা পরবর্তী খাদ্য সমস্যা দূর করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।এছাড়াও সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন সহায়তা এই সকল সমবায় সমিতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধ করা যাবে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ

মো: আবুল খায়ের( হিরু)
ডেপুটি রেজিস্ট্রার,সমবায় অধিদপ্তর
ট্রেজারার ,৩১ তম বিসিএস ক্যাডার এসোসিয়েশ