penisulaআমিনুল ইসলাম ও ফাতিমা জাহান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানি পেনিনসুলা হোটেলের শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই টানা বাড়ছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। কোন কারন ছাড়াই তিন কার্যদিবস দরে এ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৩২.৫০ শতাংশ, যা টাকার হিসেবে ৭.৮০ টাকা। এর দর বাড়ার কোন যুক্তিকতা নেই বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।  এদিকে অস্বাভাবিক দর বাড়ার বিষয়টি নজর পড়েছে বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের।

যে কারনে পেনিনসুলা হোটেলের এর কাছে শেয়ার দর বাড়ার কারন ও জানতে চায় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ডিএসই কর্তৃপক্ষের চিঠির জবাবে কোম্পানি জানিয়েছে, এ দরবৃদ্ধির নেপথ্যে কোনো অপ্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে প্রশ্ন হলো কি কারনে দর বাড়ছে পেনিনসুলা হোটেলের এর কারন খুঁজতে বের হয়েছেন দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানী টিম।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পেনিনসুলা হোটেলের শেয়ার দর বাড়ার কোন কারন নেই। একটি চক্র বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। এ গুজব চক্রটি বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে যে এ শেয়ারের দর সামনে আরো বাড়বে। আজ ডিএসই মতিঝিল ভবনে একাধিক সিকিউরিটিজ হাউস ঘুরে বিনিয়োগকারীদের বলতে শোনা যায় পেনিনসুলা হোটেলের শেয়ারের দর আরো বাড়বে।

তবে কি কারনে বাড়বে তারা বলতে পারছেন না। তারাও গুজবে কান দিয়ে শেয়ার কিনছেন। তবে কোম্পানিটির শেয়ারের দরবৃদ্ধির দৌরাতেœ গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ পোশন করছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ বলতে পারছেন না যে এই শেয়ারের দরবৃদ্ধির পেছনে কোনো মুল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা।

এ বিষয় জানতে চাইলে পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে জুয়া চলছে। একটি শক্তিশালী চক্রের সাথে কোম্পানির নিজস্ব লোকেরা কারসাজি করছে। এ বিষয় ভালো করে তদন্ত করলে সব কিছু বেরিয়ে আসবে।

captureঅনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৩ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারন জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর পেক্ষিতে ১৬ ই অক্টোবর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, এর দরবৃদ্ধির পেছনে অপ্রকাশিত মুল্যসংবেদনশীল কোন তথ্য নেই। এদিকে গত তিন কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩২.৫০ শতাংশ বা ৭.৮০ টাকা। অথাৎ আলোচ্য সময়ে গড়ে প্রতিদিন দর বেড়েছে ১০ শতাংশের ও বেশি। যার কোন যুক্তিকতা খুঁেজ পাচ্ছে না বাজার সংশ্লিষ্টসহ বিনিয়োগকারীরা।

গত দু’ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে মুনাফাও কমলেও হঠাৎ প্রথম প্রান্তিকে মুনাফ বাড়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকে প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ার প্রতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ১২ পয়সা  বেড়েছে।  তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্তৃক  কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা উচিত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫০ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৩৮ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয়  বেড়েছে ১২ পয়সা।

২১ ডিসেম্বর কোম্পানির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ২৪ টাকা। সর্বশেষে কার্যদিবসে অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত শেয়ারটির দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৮০ পয়সা। আজ একদিনেই শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ২.৬০ পয়সা এবং সর্বশেষ লেনদেন হয় ৩১ টাকা ৬০১ পয়সা।

এদিন কোম্পানিটির মোট ৬০ লাখ ৬১ হাজার ৭১৪ টি শেয়ার ২ হাজার ৫৬৪ বার হাতবদল হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ১৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩১ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ গত এক বছরে শেয়ারটির দর বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। তবে  সেই তুলনায় বাড়েনি কোম্পানিটির মুনাফা ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)।

সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুয়ারী বর্তমানে কোম্পানির মুল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশি দাঁড়িয়েছে ৩৭.৪৬। যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপুর্ণ বলেই বিবেচনা করা হয়। কারন বিশ্লেষকরা মনে করেন কোন কোম্পানির পিই রেশিও ১৫ থেকে ২০ এর উপরে গেলেই তাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপুর্ণ। তবে বিষয়টি সম্পর্কে ডিএসই একবার নোটিশ দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সে বিষয়ে কোনো খোঁজ নেয়নি। আর এ অবস্থায় দর বাড়তে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু কোম্পানির শেয়ারদর হঠাৎ বাড়তে থাকে। এ ব্যাপারে ডিএসইর পক্ষ থেকে দায়সারা নোটিশ দেওয়া হয়। যাতে বেশিরভাগ কোম্পানির দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয় না। ফলে দর বাড়ার প্রকৃত কারণও উদঘাটন হয় না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত, যেসব কোম্পানির শেয়ারদর হঠাৎ বাড়ে, তদন্তের মাধ্যমে তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি কমার পাশাপাশি বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও বুঝে-শুনে আর্থিক ভিত্তি দেখে শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তারা।

এ সম্পর্কে মশিউর সিকিউরিটিজের জিএম এ এল ভট্টাচার্য টুটুল দেশ প্রতিক্ষণ বলেন, ‘যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, সেগুলোকে ডিএসই থেকে জানতে চাওয়া হয় যে, আপনাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো জানায় তাদের কাছে মূল্য সংবেদনশীল কোন তথ্য নেই।

যদি পরবর্তী সময়ে জানা যায় ওই কোম্পানির দর বাড়ার বিষয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে এবং তা কিছু লোক জেনে লাভবান হয়েছে, তখন ডিএসই তদন্ত করতে পারে। অপরদিকে কোনো কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়লে বিএসইসি যে কোনো মুহূর্তে তদন্ত করতে পারে’ বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন, ইতিহাস পর্যালোচনা করে নেওয়া উচিত।’ হুজুগের কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে পেনিনসুলা হোটেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আগে ধারাবাহিক ভাবে মুনাফা বাড়লেও তালিকাভুক্তির পর বছর  থেকে ধারাবহিক ভাবে বড় অঙ্কের মুনাফা কমেছে।

তালিকাভুক্তির বছর ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল  ১৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পরের বছর যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে যার পরিমান আরো কমে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে  কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪৫. ১৮ শতাংশ বা ১৮ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। নভভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৮. ৩২ শতাংশ শেয়ার, এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ১৬.৬৫ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ০.২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৪৪.৪৩ শতাংশ।