dividentsশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কিছু কোম্পানি লোকসানে থাকলেও মুনাফা হয় এমন কোম্পানির সংখ্যাই বেশি। কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায় মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদেরকে বঞ্চিত করছে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে। ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে গেলে একটি কোম্পানিকে তার মুনাফার অংশ থেকে দিতে হয়। কিন্ত কোম্পানিগুলো তা নিয়ে দিয়ে শুধু স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েই তাদের দায় সাড়ছে।

স্টক ডিভিডেন্ড দিলে কোনো টাকা দিতে হয়না। তাই তারা স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ক্রমেই কমেছে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার প্রবণতা। পুজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্যতা দেখাচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব বছরের তথ্য তথ্যানুযায়ী এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৫ শতাংশ কোম্পানিই কোনো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি। ১০ শতাংশের বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ৫২ শতাংশ কোম্পানি। অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ কোম্পানি নামেমাত্র ১ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা প্রকৃতপক্ষে ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাওয়ার জন্য বিনিয়োগ করে থাকে। তাই কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি উপকৃত হয়; কিন্তু অনেক কোম্পানিই বছর বছর ভালো মুনাফা করলেও ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে চায় না।

তারা স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার মাধ্যমে কোম্পানির মূলধন বাড়ায় । বছরের পর বছর ধরে শুধু স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ায় বিনিয়োগকারীরা নগদে কিছুই পায় না, পায় শুধু শেয়ার। এমন অনেক কোম্পানি আছে যেগুলো তালিকাভুক্তির পর থেকে শুধু স্টক দিলেও ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নন।

কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর কারনে এক সময় কোম্পানিগুলো আগামীতে আরো ভালো করবে, যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরাই। জানা যায়, বাজারে তালিকাভুক্ত ২৯১টি কোম্পানির (মিউচুয়্যাল ফান্ড ও কর্পোরেট বন্ড বাদে) মধ্যে ১৫৪টি কোম্পানি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদেরকে ১০ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। রেকিট বেনকিজার দিয়েছে ৬৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড।

বিএটিবিসি ও গ্ল্যাক্সে স্মিথক্লাইন দিয়েছে ৫৫০ শতাংশ করে। এছাড়া মেরিকো ৪৫০ শতাংশ, বার্জার পেইন্টস ৩৭০ শতাংশ, বাটা সু ৩২০ শতাংশ, লিন্ডে বিডি ৩১০ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৩০০ শতাংশ এবং গ্রামীণফোন ১৪০ শতাংশ। আর ৩৩টি কোম্পানি দিয়েছে ১০ শতাংশের নিচে ক্যাশ ডিভিডেন্ড। অবশিষ্ট ১০৯টি কোম্পানি কোনো ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়নি। অথচ এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই মুনাফা করেছে। সেই মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে তারা স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে যেসব কোম্পানি শুধু বোনাস শেয়ার দেয় তাদেরকে অনুৎসাহিত করতে রাজস্ব বোর্ড কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। কর হারের মাধ্যমে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়।  যেসব কোম্পানি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিবে তাদেরকে কিছুটা কর ছাড় দেয়া যায়। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই।

এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিগুলোকে নৈতিকভাবে নগদ শেয়ার দেয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।  এতে কোম্পানিগুলোর নগদ লভ্যাংশ দেয়ার হার বাড়লে এ কোম্পানিগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়বে। যেসব কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেয় সেসব কোম্পানির শেয়ার উচ্চ দামে কিনলেও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন না।

এমনকি ২০১০-এর শেয়ারবাজার পিকের সময়ও কিছু কোম্পানির শেয়ার যে দামে ছিল বর্তমান সময়ে বাজারের সূচক তলানীতে নেমে আসলেও এ কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি ভালো। এর বড় কারণ হলো- এ কোম্পানিগুলোর নগদ লভ্যাংশ প্রদানের প্রবণতা ভালো।