majedur rahmanকে এ এম মাজেদুর রহমান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দীর্ঘ দিন ধরে সম্পৃক্ত আছেন পুঁজিবাজারের সঙ্গে। এই দীর্ঘ সময়ে দেখেছেন পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন। পুঁজিবাজার সম্পর্কে রয়েছে তার দেশ বিদেশের ব্যাপক অভিজ্ঞতা। তার অভিজ্ঞতার কিছু বিষয় শেয়ার করেছেন শেয়ারবার্তার পাঠকদের জন্য।

দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক। পুঁজিবাজারের উত্তরনের জন্য কাজ করছে দিনের পর দিন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে পুঁজিবাজারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপ হয় শেয়ারবার্তার। একান্ত আলোচনায় পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কথোপকথনেরে চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে পার-ডে টার্নওভার (প্রতিদিন লেনদেন) আড়াই হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

লেনদেন খরায় বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজটা ভালভাবে করতে পারলে সর্ব পর্যায়ে পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে। পাশাপাশি আন্তজার্তিক পুঁজিবাজারেও ডিএসই অন্যতম রিজিওনাল স্টক এক্সচেঞ্জে পরিণত হবে। তবে বর্তমান বাজারে এই কাজটি করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। ডিএসইর এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নিজ কার্যালয়ে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি, বাজারকে আরো গতিশীল করতে নতুন পরিকল্পনা এবং তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তিনি।

প্রত্যাশার এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে পারলে, ২০১০ সালে ধসের পর থেকে প্র্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসা হারিয়ে চরম কষ্টে দিন পার করা ব্রোকারেজ ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটবে বলেও মনে করেন তিনি।

এর আগে ব্যাংকিং সেক্টরে তিন দশকের বেশি সময় অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন বন্ধুসুলভ এই মানুষটি। পুঁজিবাজারে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের অনুভূতি প্রসঙ্গে মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, ‘এক কথায় দারুণ। আমি কমর্ফোট ফিল করছি।’

তিনি বলেন, আগে আমি ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ করলেও পুঁজিবাজারকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আশা করছি, আমার বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কিছু করতে পারবো।

বাজারের বর্তমান অবস্থাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? প্রশ্নের জবাবে নতুন এমডি বলেন, এই মুহূর্তে বাজার স্থিতিশীল আছে ঠিকই। কিন্তু এখান থেকে বাজারে উন্নতি হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারের পরিধি, লেনদেন ও সার্বিক অবস্থার আরো উন্নতি যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাজারে যাতে বিনিয়োগকারীরা কমফোর্ট ফিল করে, বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয় সেই চেষ্টাই আমরা করছি। নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই বাজারে চাঞ্চল্য তৈরি হবে।

এমডি হিসেবে ডিএসইকে নিয়ে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি না?  এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএসইকে ওয়ার্ল্ড ক্লাস এক্সচেঞ্জে পরিণত করবো। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে ডিএসইতে কমপক্ষে প্রতিদিন আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনদেন করতে হবে। আশা করছি, আমরা এই বেঞ্চমার্কসের বেশি লেনদেন করবো।

এমডি বলেন, ইউনিক পরিকল্পনার সাথে বড় দায়িত্ব হলো ডিমিউচ্যুয়ালাইজের যেসব স্কিম রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার তথা কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের নির্ধারিত সময়ে আনা। বিদেশিদের মধ্য থেকে ১জন কিংবা একাধিক পার্টনার আনতে পারলে স্টক এক্সচেঞ্জ দুইভাবে উপকৃত হবে। প্রথমত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের কাছ থেকে বিনিয়োগের পাশাপাশি টেকনোলজি সার্পোট পাবে ডিএসই। দ্বিতীয়ত ডিএসই ভাল প্রাইজও পাবে। বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো।

সর্বোপরি কৌশলগত বিনিয়োগকারীরা আসলে ডিএসই’র ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি এটি একটি ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্টক এক্সচেঞ্জ পরিণত হতে এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা এমডির।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ঠিক কোন কাজগুলো করতে চান? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতটুকু আস্থা অর্জন করলে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই পুঁজিবাজার বিমুখ না হয়। যাতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারাতে না হয়, ততটুকু পরিমাণে আস্থা অর্জন করবো, আশা করি।

এছাড়া প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের মধ্যে সবাইকে পুঁজিবাজার সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা দেব। জ্ঞানভিত্তিক বাজার গঠনের মাধ্যমে মার্কেটকে যোগ্য করে তুলবো। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত এবং বাজারের গুণগত পরিচালনা নিশ্চিত করা হবে।

দেশের বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসার বিষয়ে তাদের অনাগ্রহ রয়েছে, পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আনা হচ্ছে না।এর দায় কার এমন প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, মেঘনা ও যমুনা ব্রিজ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৪ কোটি টাকা আয় হয়, একইভাবে পদ্মা ব্রিজ থেকেও আয় হবে।

এটিকে বাজারে আনা গেলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে। রেলওয়ে ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসতে পারে। কিন্তু এ উদ্যোগ কে নিবে? তবে মার্কেট মেকাররা ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এ উদ্যোগ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারে আনলে আমরা সহযোগিতা করবো। আগে শেয়ার বাজারে শুধু মূলধন নিয়ে কাজ করা হত আর এখন নতুন বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে আসলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে জানান তিনি।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিনিয়োগে স্বচ্ছতা আনার জন্য যথেষ্ট আইন প্রনয়ন করা হয়েছে। আমরা সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগও করছি। এখন যে সব বিনিয়োগকারী দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করবে তারা লাভবান হবে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে যেতে হবে। পাশাপাশি কর্পোরেট গভার্নেন্স নিশ্চিত করতে হবে।