bangladesh bank cseবিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার সংজ্ঞা  বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই)। বর্তমান বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।

তাই বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চারটি প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের কাছে সিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যব্যস্থাপনা পরিচালকের লেখা চিঠিতে এসব প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সিএসই’র জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সিএসই’র দেয়া প্রথম প্রস্তাবনায়, ‘পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হলে তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শুধু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ (ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার) হিসেবে গণ্য করার সুপারিশও করা হয়েছে।

সিএসইর তৃতীয় প্রস্তাবনায়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১১ সালের সার্কুলার (সার্কুলার-ডিওএস # ৪) মেনে লং টার্ম ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট বা স্ট্যাটেজিক হোল্ডিংকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বলে গণ্য না করার কথা বলা হয়েছে।

সর্বশেষ প্রস্তাবনায় ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন সংক্রান্ত হিসাব প্রতি ১৫ দিন অন্তর জমা দেয়ার বিদ্যমান নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রিপোর্ট জমা দেয়ার সুপারিশ করেছে সিএসই। এতে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক কাটবে বলে মনে করছে কোম্পানিটি।

সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনীতি রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

এর আগে পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেও অর্থমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দায়িত্বশীলরা বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হবে বলেও মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এমন অবস্থার মধ্যেই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তাব দিল চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। এর আগে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকেও নতুন গভর্নরের কাছে গ সমন্বয়সীমা ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো,

পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিতে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার) হিসেবে গণ্য না করা, ডিএসই’র মাধ্যমে বন্ডের লেনদেন চালু এবং পুঁজিবাজারে লেনদেনের হিসার ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জমা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া প্রস্তাবনা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বশীলরা। পুঁজিবাজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তরিক হয়ে বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতার দিকে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।

উল্লেখ্য,এ বিষয়ে বিএমবিএর মহাসচিব ও এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ২০১০ সালের ধসের কারণে বাজারে অনেক টাকা আটকে গেছে। ওই সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ বা ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এ অর্থ আদায় না হওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বাড়ছে না, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে পারছেন না।

তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ঋণাত্মক মূলধনী হিসাবকে সচল করতে নতুন ফান্ড বরাদ্দের প্রস্তাব, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের মেয়াদ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব গর্ভনরের কাছে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণে ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হয়। এছাড়া সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহককে দেয়া মার্জিন ঋণের স্থিতি ও ভবিষ্যৎ মূলধন প্রবাহ বা শেয়ার ইস্যুর বিপরীতে বিভিন্ন কোম্পানিকে দেয়া ব্রিজ ঋণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে ব্যাংকের সহযোগী কোম্পানিকে (মার্চেন্ট ব্যাংক/ব্রোকারেজ হাউস) দেয়া মূলধন এ সীমার বাইরে থাকবে। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ব্যাংকের বিনিয়োগ নীতিমালায় এ পরিবর্তন আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঋণাত্মক মূলধনি হিসাবের ক্ষেত্রে নতুন ফান্ড বরাদ্দের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের বিও হিসাব ঋণাত্মক মূলধনিতে (নেগেটিভ ইক্যুইটি) পরিণত হয়েছে।

ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের মেয়াদ আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। চলতি বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের মেয়াদ শেষ হবে। এ মেয়াদ বাড়লে দীর্ঘদিন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ পাবে। এতে বাজারে তারল্য প্রবাহ বজায় থাকবে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর সর্বশেষ সংশোধনী (২০১৩-এর সংশোধনী) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে দেয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি না থাকলে কোনো ব্যাংক তার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

এর বেশি পুঁজিবাজারে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ থাকলে তা ২০১৬ সালের ২১ জুলাইয়ে নামিয়ে আনতে বলা হয়। নতুন করে দুই বছর বাড়ানো হলে ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ পাবে।