golden son lagoআফজাল হোসেন লাভলু, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের পরও থেকেই প্রকৌশলী খাতের একটি কোম্পানির মুনাফা কমতে দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের অর্থে ব্যয়বহুল ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও কারখানা সম্প্রসারণের পরও কোম্পানিগুলোর কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে। ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত পর গোল্ডেন সনের আইপিও প্রসপেক্টাস এবং সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

সাধারণত ব্যবসা সম্প্রসারণ, নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ, চলতি মুলধন যোগান কিংবা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে কোম্পানিগুলো। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পর স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানিগুলোর আয় বাড়ার কথা। কিন্তু উল্টো আয় কমছে।

যদিও কোম্পানিটি ২০১২ সাল পর্যন্ত গোল্ডেন সনের বিক্রি ও মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। তবে এর পর থেকে বিক্রি টানা কমছে।  যদিও সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গঠন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে একটি সাবসিডিয়ারির বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হলেও গোল্ডেন সনের আর্থিক প্রতিবেদনে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দিয়ে থাকে। অর্থ সংগ্রহের পরও আয় কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ ও তাইওয়ানের উদ্যোক্তাদের যৌথ উদ্যোগ গোল্ডেন সন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মূলত বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য উত্পাদন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গঠন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে তারা।

এতে কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা বাড়ার কথা। তবে বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা। তিন বছর ধরেই কোম্পানির বিক্রি ও আয় কমছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে আসে। গৃহস্থালি পণ্য, খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের ফ্যান উত্পাদন করে এর শতভাগই রফতানি করে গোল্ডেন সন।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে গোল্ডেন সন ১৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে। ২০১৩ সালে তা কমে ১৬৬ কোটি ও ২০১৪ সালে ১৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকায় নেমে আসে। পণ্য রফতানি কমে যাওয়ায় কোম্পানির নিট মুনাফাও কমছে। ২০১২ সালে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে যা ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকায় নেমে আসে।

২০১৫ সালেও পণ্য বিক্রি ও মুনাফা হ্রাসের ধারাবাহিকতা রয়েছে। প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) কোম্পানির বিক্রি ছিল ১০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২৭ কোটি টাকা। এ সময় কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮ কোটি টাকা।

golden son fincinal২০১২ সালে প্রেসার কুকারসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র উত্পাদন ও রফতানির জন্য তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান চি-হুং টেকনোলজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গোল্ডেন সিএএসএ লিমিটেড নামে আলাদা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় গোল্ডেন সন। এতে গোল্ডেন সনের মলিকানা ৭০ শতাংশ ও চি-হুংয়ের মালিকানা ৩০ শতাংশ।

গোল্ডেন সিএএসএ লিমিটেড বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর ২০১৩ সালে জিএসএল ডায়িং লিমিটেড নামে একটি ডায়িং কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয় গোল্ডেন সন। এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯০ শতাংশের মালিকানা গোল্ডেন সনের, বাকি ১০ শতাংশের মালিকানা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের হাতে।

২০১৪ সালের ১ মার্চ আরো একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের ঘোষণা দেয় গোল্ডেন সন। শতভাগ খেলনা রফতানির লক্ষ্যে জার্মানির শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী স্টেফেন ক্রিসটেনশনের সঙ্গে যৌথভাবে জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড নামে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গোল্ডেন সন।

জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড ২০১৪ সালের অক্টোবরেই বাণিজ্যিক উত্পাদনে যায়। সে সময় গোল্ডেন সন জানিয়েছিল, প্রথম বছর জিএসএল এক্সপোর্ট লিমিটেড ৪০ কোটি টাকার পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। তবে ২০১৫ সালে গোল্ডেন সনের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এর প্রভাব দেখা যায়নি।

সর্বশেষ স্টিলের আসবাব উত্পাদনের জন্য গোল্ডেন ইনফিনিটি নামে আরো একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে গোল্ডেন সন। এ প্রতিষ্ঠানের কারখানা স্থাপন ও মেশিনারি ক্রয়ে ৯২ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের বিপরীতে এনআরবি ব্যাংক থেকে ৫৪ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণও নেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে গোল্ডেন সনের সুদ ব্যয় বাড়ছে। ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে সুদ বাবদ কোম্পানির খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ কোটি টাকা। অবশ্য ২০১৫ সালে স্থায়ী আমানত থেকে সুদ বাবদ আয়ও বেড়েছে।

ধারাবাহিকভাবে বিক্রি ও মুনাফা কমার ব্যাপারে কোম্পানির বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় কোম্পানি পরিচালনায় এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

বেলাল আহমেদ সরাসরি রফতানির বিষয়টি দেখভাল করতেন। তার অসুস্থতার কারণে মূলত কোম্পানির ব্যবসায়িক যোগাযোগে দুর্বলতা দেখা গেছে, যার কারণে রফতানি আদেশ কমছে। এরই প্রভাব পড়ছে কোম্পানির আয় ও মুনাফায়।

২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন সনের পরিশোধিত মূলধন ১৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২০১২ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৪ টাকা ২৬ পয়সা, ২০১৪ সালে যা ২ টাকা ১ পয়সায় নেমে আসে। আর চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সায়। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে শেয়ারহোল্ডারদের সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।