hamid fabrics lagoআমীনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ব্যবসা সম্প্রসারণ ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে বেশি লাভবান হওয়ার আশায় শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন কোম্পানির উদ্যোক্তারাকিন্তু মূলধন নেওয়ার পর কোম্পানির মুনাফার হার কমছেফলে শেয়ারবাজার উদ্যোক্তাদের উপকারে আসছে নাতবে মুনাফার পরিমাণ বেশি দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা নেওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে আরো মূলধন সংগ্রহের পরও বস্ত্র খাতেরিএকটি কোম্পানির মুনাফা কমতে দেখা গেছেবিনিয়োগকারীদের অর্থে ব্যয়বহুল ব্যাংকঋণ পরিশোধ কারখানা সম্প্রসারণের পরও কোম্পানিগুলোর কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হামিদ ফ্যাব্রিকস আইপিও প্রসপেক্টাস এবং সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে

বিদেশে পণ্য রফতানিতে কর, বন্ড ও তুলনামূলক কম সুদে ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকে দেশের বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বড় অঙ্কের মূলধন সংগ্রহ করছে কোম্পানিগুলো, যা ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যয় হচ্ছে। সহজ শর্তে বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ ও সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুবিধার পর বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধির কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।

হামিদ ফ্যাব্রিকস ২০১৪ সালে আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে ২৫ টাকা প্রিমিয়াম নেয় কোম্পানিটি। সংগৃহীত অর্থে ৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণে ৭২ কোটি টাকা ব্যয় করে কোম্পানিটি।

প্রসপেক্টাসে আইপিওর অর্থ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা জানায় কোম্পানিটি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে কোম্পানিটি আইপিওর অর্থ সংগ্রহ করে। এর পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হয়নি।

এদিকে বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করলেও এর কোনো সুফল হামিদ ফ্যাব্রিকসের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে না। বরং আইপিও-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বর্তমানে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা আরো কমেছে। গেল বছর ২০১৪ সালের তুলনায় কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সময়ে কোম্পানির পণ্য বিক্রির পরিমাণও ১৮ শতাংশের বেশি কমেছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে হামিদ ফ্যাব্রিকসের রেভিনিউ ছিল ২১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা পরের বছর ১৭৮ কোটি ২৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। এক বছরের ব্যবধানে পণ্য বিক্রি কমলেও বেড়ে গেছে উত্পাদন খরচ।

২০১৪ সালে কোম্পানির রেভিনিউর বিপরীতে উত্পাদন খরচ ছিল ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে রেভিনিউর বিপরীতে উত্পাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ দশমিক ৫৯ শতাংশে। এ সময় প্রশাসনিক ব্যয়ও বেড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফায়।

২০১৫ সালে হামিদ ফ্যাব্রিকসের কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে হামিদ ফ্যাব্রিকসের কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে ৫১ শতাংশ। ২০১৪ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৪ টাকা ৮১ পয়সা, যা ২০১৫ সালে ১ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটি কর-পরবর্তী মুনাফা দেখিয়েছে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।

আয় কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে হামিদ ফ্যাব্রিকসের চেয়ারম্যান এএইচএম মোজাম্মেল হক শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে  জানান, কারখানা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে পুরনো যন্ত্রপাতি বদলে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। এ কারণে সে সময় কোম্পানির উইভিং ইউনিটের উত্পাদন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে রেভিনিউ কমে যায়, যা মুনাফায় প্রভাব ফেলে।

মুনাফার পরিমাণ বেশি দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসায় আইপিওর পরে কোম্পানিগুলোর এমন অবস্থা বলে জানান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। পুঁজিবাজারে আসার পর অনেক কোম্পানি লভ্যাংশ দেওয়ার ভয়ে মুনাফা কম দেখায় বলেও জানান তিনি। এই সমস্যা দূরীকরণে বিএসইসি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন আবু আহমেদ।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে কোম্পানি ও অডিটরস মিলে ধাপ্পাবাজি করে আইপিওতে আসছে। তাই কোম্পানির দেওয়া হিসাব তিনি নিজেও বিশ্বাস করেন না এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা করে না বলে জানান তিনি।

কোনো কোম্পানির ব্যবসায়িক ফলাফলের সাথে বিএসইসির কোনো সম্পক্র্ নেই বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মূখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক এম. সাইফুর রহমান। একটি কোম্পানির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত দেখে বিএসইসি মূলধন তোলার অনুমোদন দেয় কীনা?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোম্পানির অপারেশনের উপর নির্ভর করে মুনাফা। আর সেই দায়িত্ব বিএসইসির নয় এবং এ বিষয়ে বিএসইসির কেউ মন্তব্য করেন না বলে জানান সাইফুর রহমান।