1`বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল ছাড়াই আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহারের উপযোগী ফায়ার সার্ভিস পাম্প আবিষ্কার করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের তারিকুল ইসলাম তারেক। এই টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি একশ’ ফুট ওপর পর্যন্ত ওঠানো যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই যন্ত্র হাট-বাজার, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটসহ কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী পৌঁছার আগেই আগুন নেভানোর কাজে সহায়ক হবে বলেও তিনি দাবি করেন।

ধুপুর শহর থেকে ১০ কি. মি. উত্তরে অরণখোলা ও মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ভবানীটেকি গ্রামে ১৯৭৫ সালে তারেকের জন্ম। তার বাবার নাম আ. ছামাদ। মায়ের নাম জহুরা বেগম। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তারেক সবার ছোট। অভাবের সংসারে জীবন চালিয়ে নিতে ১৯৮৮ সালে তারেক পুরনো স্যালোমেশিন ঠিক করার কাজ শুরু করেন।
পুরনো নষ্ট মেশিন কিনে তা মেরামত করে বিক্রি করতেন তারেক। ধীরে ধীরে এলাকায় স্যালো মেকার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান।

এ কাজ করার পাশাপাশি তিনি নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমেই পুরনো স্যালো মেশিনের লাইনার, রিকশা-ভ্যানের পুরানো এক্সএল, বেয়ারিং, পুরনো লোহার পাইপ, মেশিনের ওয়ারস্যালন মতো জিনিস দিয়ে তৈরি করেন একটি টিউবয়েল।

মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এ পাম্প দিয়ে বেশি পরিমাণে পানি পাওয়া যায় বলে এটির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর নামকরণ হয় তারেক পাম্প। এরপর তারেক আরও তিন ধরনের পাম্প তৈরি করেন। সেগুলোর নাম দেন ডায়াবেটিস পাম্প, ফায়ার সার্ভিস পাম্প, সাধারণ পাম্প।

২০০২ সালে তার নিজ গ্রাম ভবানীটেকির চোরাস্তার মোড়ে হাসান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নামে ছোট একটি ওয়ার্কসপ স্থাপন করেন। এখানেই তৈরি করেন দুই পা দিয়ে চেপে পানি ওঠানোর আধুনিক টিউবওয়েল। নাম দেন ডায়াবেটিস পাম্প। যাদের ডায়াবেটিক আছে তাদের শরীর চর্চারও কাজে আসে এই টিউবওয়েল।

তারেক জানান, এ টিউবওয়েল প্রতিদিন ১০/২৫ মিনিট চেপে পানি ওঠালে গৃহস্থালির পানির চাহিদা মিটবে এবং ডায়াবেটিসও অনেকটা আয়ত্তে আসবে। এ পাম্প থেকে প্রতি মিনিটে ৩০-৪০ লিটার পানি ওঠানো সম্ভব। এ টিউবওয়েলের দাম ১০ হাজার টাকা।

এরপর তারেকের উদ্ভাবিত ফায়ার সার্ভিস পাম্প বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলে। এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ওঠানোর জন্য এই পাম্প ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
হাট-বাজার, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটসহ কোথাও আগুন লাগলে এই পাম্পের সাহায্যে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য ছাড়াই সহজে পাইপের মাধ্যমে আগুন নেভানো যাবে বলে দাবি করেন তিনি। এটিও সাশ্রয়ী মূল্যে স্থাপন করা যায়।

অক্সফামের সহায়তায় মধুপুর জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ ও মধুপুর গড় ক্যাম্পেইন গ্রুপ  আয়োজিত ‘গ্রামীণ জীবনযাত্রা মেলা-২০১২’ তে এই পাম্প উদ্ভাবনের জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক হিসেবে কৃষি সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি পাম্প তৈরির কাজ বাড়াতে পারছেন না। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তার তৈরি টিউবওয়েলগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

ভবানী গ্রামের অধিবাসী জয়নাল আবেদীন (৪৮) জানান, তারেকের পড়াশোনা কম থাকলেও তার প্রযুক্তিগত জ্ঞান অনেক বেশি। কম দামে পাহাড়ের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে তারেকের তৈরি পাম্প টিউবওয়েল বড় ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে আর্থিক সহযোগিতা পেলে স্থির বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন বলে জানান তারেক।