পুঁজিবাজার সপ্তাহজুড়ে অস্থির অবস্থা বিরাজ ছিল। বাজারের অস্থির আচরনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যদিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো পুঁজিবাজার। অস্থির পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনে সব ধরনের সূচকের পাশাপাশি কমেছে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমানও। একই সঙ্গে কমেছে পিই রেশিও ও বাজার মূলধন। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিনই দরপতন হয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজার একটা স্পর্শকাতর বাজার। দেশের যেকোনো ঘটনা ঘটলে তা পুজিবাজারের ওপর প্রভাব পড়ে। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব, স্থায়ী বিনিয়োগ না হওয়ার পাশাপাশি সম্পূর্ণ নীরব এবং নিস্কিয় রয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও তারল্য সংকটের পাশাপাশি ব্যাংকের এক্সপ্রোজাল লিমিট বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অতংক আর অনিশ্চয়তায় দরপতন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে সারা সপ্তাহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ সময় তারা বাজার পতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ইস্যুটিও দরপতনের একটি অন্যতম কারণ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না।

অন্যদিকে আইপিও এর মাধ্যমে আসা নতুন কোম্পানির শেয়ারগুলোর শেয়ার বিক্রি করে প্রাথমিক বিনিয়োগকারীরা শত শত কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। যে কারণে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ কমে গেছে। ফলে লেনদেন ৩০০ কোটির টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে।  এছাড়াও পুঁজিবাজার একটা স্পর্শকাতর বাজার। দেশের আইন শৃঙ্খলা ব্যাহত হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। সব মিলিয়ে বাজার নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আশা করছি খুব শিগগিরেই বাজার উন্নতি হবে।

এদিকে পুঁজিবাজারের চলমান ধ্বস ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়াতে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) কাছে লিখিত আবেদন করবে বিএসইসি।

সাধারণ বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ঋণ সমন্বয়ের মেয়াদ বাড়াতে চিঠি দেবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ডিএস৩০ সূচক কমেছে ২২ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর শরীয়াহ বা ডিএসইএস কমেছে ১৭ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। গেল সপ্তাহে হ্রাস পেয়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩২৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৬৭ টির, কমেছে ২৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির। আর লেনদেন হয়নি ৩টি কোম্পানির শেয়ার।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা দশমিক ৯৬ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫০৪ কোটি  ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আর গত সপ্তাহে ডিএসইতে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৪০৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। আর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে ১৪ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহে সিএএসপিআই সূচক কমেছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সিএসই৩০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর সার্বিক সূচক সিএসইএক্স কমেছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। সপ্তাহে সিএসইতে গড়ে মোট লেনদেন হয়েছে ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৪টির, কমেছে ১৯৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১০৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫০ টাকা।

ফাতিমা জাহান