পুঁজিবাজারে স্মরনকালের ধস নামার পর সাড়ে ৪ বছর অতিক্রম হয়েছে। ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে পুঁজিবাজারের আওতা ও পরিধি। কিন্তু বিনিয়োগের আস্থা তৈরি না করায় ক্রমেই বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে পুঁজিবাজার ধারাবাহিকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সেই তুলনায় বাড়ছে না বিনিয়োগকারীদের আস্থা।

এর মূল কারণ বিভিন্ন অসাধু বিনিয়োগকারীর অবাধ গমন বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলেন, বাড়ছে নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। সে তুলনায় বাড়ছে না উত্তম শেয়ার সরবরাহ। বর্তমান বাজারে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়েও দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে দেখা গেছে। মূলত বিভিন্ন ধরনের গুজবে এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে।

তাছাড়া মুনাফালোভী কিছু বিনিয়োগকারী স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগে ঝুঁকে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব ভ্রান্ত ধারণাকে পুঁজি করে একটি চক্র পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্র। তাই দিনদিন বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা বাড়ছে বলে জানান তাঁরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন। এদিকে দেশের শিক্ষিত যুবক কর্মস্থানের অভাবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের কর্মস্থানের জন্যও পুঁজিবাজারের ইতিবাচক গতি এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরানো সম্ভব। কারণ সচেতন বিনিয়োগকারীরা গুজবের ভিত্তিতে নয়, বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করে। তদের হিসাব ভিত্তিক বিনিয়োগ বা লেনদেন শেয়ার বাজারের জন্য ইতিবাচক।

পক্ষান্তরে অসচেতন বিনিয়োগকারীরা গুজবনির্ভর হয়ে বিনিয়োগ করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে পুঁজিবাজার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় বলে জানান তাঁরা। সচেতন বিনিয়োগকারীদের মতে, আমাদের দেশের পুঁজিবাজার উন্নত বিশ্বের বাজারের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তাই এখানে গেম্বলাররা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দুর্বলতাকে কাজে লাগাবেই।

যেহেতু এসব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করার জন্য আমাদের কোনো এনালিস্ট নেই, তাই বিনিয়োগকারীদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। তবেই একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠন করা সম্ভব হবে বলে জানান তাঁরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কোনো যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ২০১০ সালের আগে বিনিয়োগকারীদের বাজারে আনার ক্ষেত্রে নানামুখী প্রশিক্ষণ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাউজের শাখা খোলা ইত্যাদি কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। যা আবার চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাজারে ভালো নতুন কোম্পানি আনতে হবে। প্রিমিয়াম ছাড়া এদের নিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনদেন কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করছে। এ স্বাভাবিক আচরণের ধারাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। এ পরিবেশে সচেতন বিনিয়োগকারীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তারা মনে করেন, পুঁজিবাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গা। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আবেগনির্ভর হওয়া ঠিক নয়। কোম্পানির প্রোফাইল পর্যালোচনা পূর্বক ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুজব নির্ভর না হয়ে সর্বদা নিজের বিচারবুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হবে বলে করেন তাঁরা।

আদিল সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে আকৃষ্ট করতে হবে বিনিয়োগকারীদের। বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা। বাড়াতে হবে পুঁজিবাজার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা।
স্টাফ রিপোর্টার