পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা, ডিএসইতে দুই মাসে সূচক উধাও ৬১৭ পয়েন্ট
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে পতনের ঝড় থামেনি। আস্থাহীনতাও চরমে। ১৪ মাস ধরে এক কার্যদিবস সূচক বাড়ে তো তিন কার্যদিবস পতন। বলতে গেলে পুঁজিবাজারটি একেবারেই সরকারের মনোযোগের বাইরে। দীর্ঘদিনের জঞ্জাল সরিয়ে একটি স্থিতিশীল ও আস্থার বাজারে পরিণত করার আন্তরিক প্রচেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দেখা যায়নি। ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনের রেকর্ড করেই যাচ্ছে। যার ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের ‘কফিনে আরেকটি পেড়েক’ বসল। এদিন সূচকের পতন হয়েছে ৪১ পয়েন্ট।
মুলত ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু পুঁজিবাজার। প্রশ্ন উঠছে সব খাতে সংস্কারের পর ঘুরে দাঁড়ালেও পুঁজিবাজার কেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না এর রহস্য কী। এছাড়া গত ১৪ মাসে পুঁজিবাজারের বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন।
ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার ইঙ্গিত মিললেও পুঁজিবাজার চলছে সেই পুরানো উল্টো পথে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ মাস পুঁজিবাজারের কোন উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বারবার আস্থার সংকট, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা মনে করে বিএসইসির অদক্ষ্য ও অযোগ্য কমিশনের কারণে বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারের। ফলে বর্তমানে পুঁজিবাজার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তবে টানা দরপতন হলেও মুখ খুলছে না রাশেদ মাকসুদ কমিশন। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কারের নামে অস্থিতিশীল করছেন। ফলে ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে।
গত বছরের ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ৭৫৯ পয়েন্ট। মুলত রাশেদ মাকসুদ কমিশন যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিএসই সূচক ছিলো ৫৭৭৮.৬৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৫০১৯.৭২ পয়েন্ট। আর গত দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক হারিয়ে ৬১৭ পয়েন্ট। গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই সূচক ছিলো ৫৬৩৬ পয়েন্ট। আর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক ৪১ পয়েন্ট হারিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০১৯.৭২ পয়েন্ট।
পাশাপাশি টানা সূচকের দরপতনে দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া কমিশন সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও মার্জিন ঋণ ইস্যুতে নানা গুজবে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪৬ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬ টির, দর কমেছে ২৭৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩ টির। ডিএসইতে ৪৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫০ কোটি ৫ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৩৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৪টির আর ২৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

