শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে নানান সংকট আর বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। সব থেকে বেশি আস্থার সংকটে রয়েছে যেন ব্যাংক খাত। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ১৮টি ব্যাংকের শেয়ার ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টির শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে। অথচ বাজার থেকে এখন সাধারণ মানের একটি চকলেট কিনতে গেলেও ৫ টাকা গুনতে হয়। অর্থাৎ এক পিস চকলেটের দামেই এখন একাধিক ব্যাংকের শেয়ার কেনা যাচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যাংকখাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। মালিকদের পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সুশাসনের অভাবে বেড়েছে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ। সব মিলিয়ে ব্যাংকখাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের শেয়ার দামে এমন দৈন্যদশা।

তারা বলছেন, একসময় দেশের পুঁজিবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হতো ব্যাংকখাত। ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বড় অংশ থাকতো ব্যাংকের শেয়ারে। কিন্তু ব্যাংকখাতের নানান অনিয়মের কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। তাদের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে সার্বিক পুঁজিবাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে ১৮ ব্যাংকের শেয়ার। যার মধ্যে ৫টির শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে। এ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৪ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ২০ পয়সা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ২ টাকা ৮০ পয়সা, ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ৭০ পয়সা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ১০ পয়সায় অবস্থান করছে।

ফেস ভ্যালুর নিচে থাকা বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ২০ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৩০ পয়সা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৮০ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ১০ পয়সা, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৯০ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সা,

এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৬০ পয়সা, এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৯০ পয়সা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৯০ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৭০ পয়সা, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৬০ পয়সা এবং এবি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।

অপরদিকে, ফেস ভ্যালুর ওপরে থাকলেও ১০টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ২০ টাকার নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৭ টাকা ২০ পয়সা, ব্যাংক এশিয়া ১৫ টাকা ১০ পয়সা, সিটি ব্যাংক ১৯ টাকা, ঢাকা ব্যাংক ১০ টাকা ৬০ পয়সা, যমুনা ব্যাংক ১৬ টাকা ৯০ পয়সা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০ টাকা ৮০ পয়সা, রূপালী ব্যাংক ১৭ টাকা ২০ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৬ টাকা ৮০ পয়সা, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮ টাকা এবং ইউসিবি ব্যাংক ১০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

এছাড়া উত্তরা ব্যাংক ২১ টাকা ১০ পয়সা, প্রাইম ব্যাংক ২১ টাকা ৭০ পয়সা, ইস্টার্ন ব্যাংক ২২ টাকা ৪০ পয়সা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৪ টাকা ৯০ পয়সা, পূবালী ব্যাংক ২৫ টাকা ১০ পয়সা, ইসলামী ব্যাংক ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৩৯ টাকা ১০ পয়সা ও ব্র্যাক ব্যাংক ৪৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংক খাতের এই সংকট পুঁজিবাজারের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ। বাজার মূলধনের বড় অংশজুড়ে রয়েছে ব্যাংক। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক খাতের কাঠামোগত সংস্কার, দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।