শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে চাঙা হচ্ছে পুঁজিবাজার। ফলে পুঁজিবাজার উঠানামার মধ্যে দিয়ে স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। যে কারণে ধীরে ধীরে গতি ফিরছে সূচক ও লেনদেনে। কিন্তু সূচক যেভাবে বাড়ছে, লেনদেন সেভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে না। তাই স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এর আগেও কয়েকবার বাজার বড় উত্থানের আভাস দিলেও টেকসই হয়নি। এবার যেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকে সেই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া দরপতন কাটিয়ে চাঙা পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে ঝোঁক বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন। এই কারণে সূচকও বাড়ছে, লেনদেনও বাড়ছে। তবে সূচক যে হারে বাড়ছে, লেনদেন সে হারে বাড়ছে না। এর কারণ হলো, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন করছে। তারা লোকসানে শেয়ার ছাড়তে চাইছে না। যে কারণে শেয়ারের দাম বাড়লেও বিক্রির চাপ কমে যাচ্ছে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার উঠানামার মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে চাঙা হচ্ছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা ছিল। কিন্তু বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনের পরে বিরোধী শিবির থেকে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচির ঘোষণাও আসেনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে শেখ হাসিনাকে, যা নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিচ্ছে। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে; যার প্রতিফলন ঘটেছে পুঁজিবাজারে।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু কোনো রকম সংঘাত ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; সেটাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, নতুন সরকার এবার পুঁজিবাজারের দিকে নজর দেবে। নির্বাচনের পরে স্বাভাবিকভাবেই এমনটা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, নির্বাচনের পরে সার্বিক পরিবেশ ইতিবাচক রয়েছে। আশা করি দ্রুত একটি টেকসই বাজার পাবে বিনিয়োগকারীরা। তাই বিনিয়োগকারীদের বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলেও এখান থেকে মুনাফা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে সূচকের কিছুটা নিম্নমুখী প্রবনতা দেখা গেলেও দিনশেষে সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে ভর করে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ১২৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩৩৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, দর কমেছে ৬৮টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৯টির। এদিন ডিএসইতে ৬৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৬৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আজ সিএসইতে ১৭৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৪টির, কমেছে ৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের। আগের দিন সিএসইতে ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৫৮টির, কমেছিল ৬৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের।