শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাগজ ও প্রকাশনা খাতের কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখেও না দেখার ভান করছে। ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার নিয়ে চলছে ওপেন কারসাজি। যা খালি চেখে দেখা যায়। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেখে পড়ছে না। কোম্পানিটি দীর্ঘ পাঁচ বছরেও আয়ে ফিরতে পারেনি।

যে কারণে গত দুই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যও ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। এর উৎপাদন কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ। এরপরও কিছুদিন যাবত কারসাজির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিটির শেয়ারদর। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও লাগাম টানা যাচ্ছে না দুর্বল এই কোম্পানির শেয়ার দামে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধাে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারদর নিয়ে চিহ্নিত একটি চক্র কারসাজি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাতের ছোঁয়ায় শেয়ারটির দাম আকাশছোঁয়া অবস্থায় পৌঁছেছে। কারসাজি ছাড়া দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ এই কোম্পানির শেয়ারদর এত মাসের কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিগুণ হওয়ার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ অক্টোবর ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ৯ টাকা ৮০ পয়সায়। বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২৭ টাকা। লাগামহীন শেয়ারদরের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ২০২০ সালে। ওই বছর শেয়ারহোল্ডারদের নামমাত্র ০.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া হয়।

ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২২ সাল) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ১০ পয়সা করে সর্বমোট ২২ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এর আগের বছরও ৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি।

শুধু তাই নয়, সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক হয়েছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদের মূল্য ছিল ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ১ টাকা ৮৬ পয়সা। এছাড়াও কোম্পানিটির রিজার্ভও ছিল ঋণাত্মক ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ঝুঁকিপূর্ণ এই কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই। কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য আছে কিনা তা জানতে চেয়ে গত ৭ নভেম্বর চিঠি পাঠালে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফেরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহয়োগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, উৎপাদন বন্ধ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আগে ভাবা উচিত। কারণ পুঞ্জিভূত লোকসানী কোম্পানি যতই আকাশচুম্বি দাম বাড়ুক আর মুনাফা দিক বিনিয়োগকারীরা কেন লোভ করবেন। আর লোভে পড়ে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে পুঁজি হারাবেন এটা ভাবা উচিত। তাই যে কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের পূর্বে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বুঝে শুনে বিনিয়োগ কর উচিত বলে তিনি মনে করেন।