শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। গত দশ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অগ্রগতি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হয়েছে। অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। শ্রমের মূল্য কম এবং বিনিয়োগ করলে মুনাফা সহজে দেশে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরতে জার্মানের বার্লিনে রোড শো বা বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।

বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সোমবার (৩০ অক্টোবর) জার্মানির বার্লিনে সম্মেলন শুরু হবে। এতে জার্মানে বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন। এছাড়াও ১ নভেম্বর ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং ৩ লভেম্বর বেলজিয়ামের ব্রাসেলস অনুষ্ঠিত হবে বিনিয়োগ সম্মেলন। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় জানানো হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রূপকল্প-২০৪১ সালের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেখানে অবকাঠামো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিক এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) তথ্য মতে, চলতি বছরের সাড়ে ১০ মাসে ৯০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে।

বিনিয়োগ বাড়াতে এবং ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ৯০ ধরনের সেবা দিচ্ছে বিডা। গত বছর ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিটে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে দেশের বন্দরগুলো উন্নয়ন ও পরিচালনায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, পরিবহন খাত বিনিয়োগের জন্য উম্মুক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত পিপিপি কাঠামো তৈরি করা।

এছাড়া দেশে ৩৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে, যেগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষিত ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, যা বিশ্বে অনলাইন শ্রমের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম। বাংলাদেশে যেভাবে অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হচ্ছে, সেটা এমনকি সিঙ্গাপুরের কয়েকগুণ বড়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোগ্যপণ্য ব্যবহার বেড়েছে, বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স, ফ্রিজ-এসির মতো গৃহস্থালি পণ্য, মোটরবাইক- ইত্যাদি একসময় বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও এখন দেশেই উৎপাদন বা সংযোজন করা হচ্ছে। সেজন্য অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এর মধ্যেই সেটা লক্ষ্য করে আসতে শুরু করেছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে।

এ ছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন, তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।

দেশের শেয়ারবাজারকে বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও শহরে ধারাবাহিক রোড শো করার পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি। কমিশন মনে করে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যে অর্জন ও সম্ভাবনা আছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে সেভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণে এ ধরনের রোডশো বড় ভূমিকা রাখবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ এখন বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। আমাদের দেশে এখন বিনিয়োগের অনেক বড় ক্ষেত্র রয়েছে। বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নকে আরও বেগবান করার সুযোগ রয়েছে। এই মুহর্তে দেশে নিয়োগ আনা বড় কাজ বলেই আমরা অনেক সমালোচনার মধ্যেও কান্টি ব্র্যান্ডিং শুরু করেছি। কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং ছাড়া আপনি যে আসলেই যে কী তা কীভাবে মানুষ জানবে।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে দেশে বিনিয়োগের দরকার ৯শ বিলিয়ন ডলার। আর আমাদের সক্ষমতা আছে ৪২৫ বিলিয়ন। ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘাটতি রয়েছে। এই বিনিয়োগ তো আমাদের বিদেশ থেকে আনতে হবে। সেজন্যই আমাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কান্টি ব্র্যান্ডিং করছি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, এখন আর বিদেশি বিনিয়োগে কোন চ্যালেঞ্জ নেই।