শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কার চেয়ে কয়েক গুণ বড় বাংলাদেশের অর্থনীতি। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনরোষ ও বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালের জুলাইয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটির তৎকালীন সরকারের পতন হয়। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে বহুলাংশে পিছিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজার থেকে রিটার্নে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকে রিটার্ন এসেছে ২ দশমিক ২০ শতাংশ। এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজারের সূচকে রিটার্ন এসেছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে ৫ গুণ বেশি রিটার্ন এসেছে শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজার থেকে।

২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসের বিশ্ব পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরেছে গ্রিন ডেল্টা ড্রাগন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এ বিষয়ে কোম্পানির রিসার্চ বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বাজার নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। এর মধ্য থেকে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।’

প্রকাশিত প্রতিবেদনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের সূচকের পরিসংখ্যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার সূচকে। আর সবার পেছনে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এতে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। আর শ্রীলঙ্কা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৪৪ পয়েন্টে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২০৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ এই ৬ মাসে ১৩৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২০ শতাংশ রিটার্ন এসেছে সূচকে। বিপরীতে একই সময়ে শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজারের সূচক ‘সিএসই অল-শেয়ার’ ১১ দশমিক ১০ শতাংশ রিটার্ন দিয়ে ৯ হাজার ৪৪৩ পয়েন্টে অবস্থান নেয়।

এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম মঙ্গলবার ইআরএফ আয়োজিত পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সেমিনারে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার অবস্থা এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল যে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো পথ ছিল না। অন্যান্য বাজারের চেয়ে আমাদের বাজার কিছুটা অস্থির হওয়ার কারণে বরং ভালো অবস্থানে রয়েছে, বেশি খারাপ অবস্থানে যায়নি।’

শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশের চেয়ে ছোট অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামের পুঁজিবাজারও রিটার্নে এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছরের ৬ মাসে ভিয়েতনামের পুঁজিবাজার সূচক ‘ভিএনআই ৩০’ রিটার্ন দিয়েছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা বাংলাদেশের চেয়ে ৫ গুণের বেশি।

এর বাইরে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পুঁজিবাজার থেকে। সবার শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সূচক ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ জুন শেষে ৪ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। ৬ মাসে সূচকটি ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। আর ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ রিটার্নে ভারতের বিএসই সেনসেক্সের অবস্থান জুন শেষে দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৭১৮ পয়েন্টে।

তবে রিটার্নের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজার। গত ৬ মাসে পাকিস্তানের প্রধান সূচক ‘করাচি ১০০’-এর রিটার্ন বাংলাদেশের সমান ২ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন শেষে সূচকটির অবস্থান দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ‘এফটিএসই ১০০’-এ রিটার্ন এসেছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। জুন শেষে সূচকটির অবস্থান ৭ হাজার ৫৩১ পয়েন্টে। আর ২ দশমিক ৮০ শতাংশ রিটার্ন এসেছে ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজারের সূচক ‘আইডিএক্স কম্পোজিট’ থেকে।