শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের মুনাফা কমার সঙ্গে ক্যাশ ফ্লোতে ধস নেমেছে। সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়ালেও এখন আর ক্রেতা নেই কোম্পানিটির। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডের ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফা ৮.২০ শতাংশ কমেছে। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) সমাপ্ত বছরে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।

কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আয় কমা ও লোনের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিরিক্ত সঞ্চিতি রাখার ফলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের আয় কমেছে। কোম্পানির প্রকাশিত আর্থক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্বন্বিত আয় (ইপিএস) ১.২৫ টাকা, যা আগের বছরে হয়েছিল ১ টাকা ৩৬ পয়সা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে ১২ শতাংশ (৬ শতাংশ নগদ এবং ৬ শতাংশ স্টক) লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২২ সালেরর ২৩ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ারটি ৪৪ টাকা ১০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে।

এদিকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যা হলো- বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। অন্যদিকে ২০২২ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নেট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৪১ পয়সা ও সমন্বিত শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো মাত্র ৬৬ পয়সা। যা এর আগের অর্থবছরে ছিল ১৬ টাকা ৭২ পয়সা ও ৬ টাকা ২১ পয়সা।

অর্থাৎ কোম্পানির নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লোতে এক ধরনের ধস নেমেছে। (নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দিয়ে একটি কোম্পানির সক্ষমতা যাচাই করা হয়। ক্যাশ ফ্লো কমা মানে কোম্পানিটির আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল হওয়া) ৬০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

কোম্পানিটির মোট ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৭টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার ও ৫৩ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কেনা বাড়িয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তারা এ শেয়ার ধারণ করেন।

২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের স্বল্পমেয়াদী ঋণ রয়েছে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ৬ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির পিই রেশিও ৩০ দশমিক ৬৩। সাধারণত পিই ২০-এর নিচে থাকলে ওই শেয়ারে বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। এ হিসেবে এই শেয়ারে বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফ্লোর প্রাইসে এ শেয়ারের দর আটকে যাওয়ার আগে গত এক বছরের বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, এ কোম্পানির শেয়ার দর হঠাৎ হঠাতই বেড়েছিল।

২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের শেয়ার দর ছিল ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা। আর ১৩ জুন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ টাকা ১০ পয়সায়। ঠিক তার পরের মাসের ২৪ জুলাই দর কমে দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৬০ পয়সায়। এখন ফ্লোর প্রাইসে আটকে শেয়ারটি লেনদেন হচ্ছে ৪৪ টাকা ১০ পয়সায়।