শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সুচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটসহ নানা ইস্যুতে বছরের শুরু থেকেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের পুঁজিবাজারে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে নেয়া হয়েছে নানামুখি উদ্যোগ। তবে সেসব উদ্যোগের তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না।

বরং বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে নীরবে ডুবছে পুঁজিবাজার। এ যেন দেখার কেউ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা মুখে বড় বড় বুলি বললেও বাস্তবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। অথচ দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। আর নানা গুজবে নীরবে তলিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।

এছাড়া বড় বড় ইস্যুর ডামাডোলে সরকার, নীতিনির্ধারক আর গণমাধ্যমের মনোযোগের বাইরে থাকা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কষ্টের টাকা নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গাটি এখন চরম অনিরাপদ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার জোরাজুরিতে মাঝে সাজে বাজারটিকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা হলেও তা টেকসই হয়নি। এক দিন বাজারে সূচকের উত্থান হলে এর পরে টানা কয়েক দিন চলতে থাকে পতন।

জানা যায়, সুশাসনের বিচারে বিশ্বের বেশির ভাগ পুঁজিবাজারের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এটি নিরাপদ বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবেও দাঁড়াতে পারছে না। সংকট দেখা দিলে সরকারকে তহবিল ও নীতিসহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়। এভাবে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিগত কয়েকটি বড় কেলেঙ্কারির পর নানা পদক্ষেপেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের সার্বিক অর্থনীতি যখন বিভিন্ন সংকটের মধ্যে, তখন পুঁজিবাজারটিও একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে।

জানা গেছে, আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০.৭৪ পয়েন্ট বা ০.৮০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২১৫.২৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৫.৩২ পয়েন্ট বা ১.১২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৯.৫০ পয়েন্ট বা ০.৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৮.৮৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৮০.৪০ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৪২২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৫৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০টির বা ৬.৪৯ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ৬৮টির বা ২২.০৮ শতাংশের এবং ২২০টির বা ৭১.৪৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৩.২৪ পয়েন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৯.৭৪ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ১৫২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩৮টির আর ৯২টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মুহাম্মদ মহসিন বলেন, নানা ইস্যুতে ঘুরে দাঁড়াতো পারছে না পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বললে চলে। এছাড়া কারসাজি চক্রের বিচার না হওয়ায় বাজারে আস্থা সংকটের মুল কারণ বলে তিনি মনে করেন। ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাতে বাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এ জন্য বাজার উঠে দাঁড়াতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন করে নানা ধরনের গুজব-গুঞ্জনও ডালপালা মেলছে। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির বিপুল চাপ তৈরি হয়েছে, কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। এই অবস্থায় শেয়ারের মূল্য আরও কমছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নিচে শেয়ারের দর নামছে না। এই অবস্থাতেও অনিশ্চয়তার কারণে শেয়ার কিনতে চাইছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থার প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। এছাড়া ব্যাংকে টাকার ঘাটতি আছে, এমন গুজবের কারণেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই’র মূল্য সূচক টানা দরপতন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মত পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আশ^স্ত করা।

সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোন কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ফ্লোর প্রাইস এই মুর্হুতে তুলে নেয়া ঠিক হবে না বলে মত দেন তিনি। এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধরার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ধৈর্য্য ধারন করা। কারণ ফ্লোর প্রাইসের নিচে কোন শেয়ার নামতে পারবে না। এছাড়া কারসাজি চক্রের কারণে বর্তমান বাজারের এ ধন্যদশা বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজার কখনোই স্বাভাবিক গতিতে চলেনি। কারসাজি চক্রের ইশারায় বাজার বেড়েছিল। এখন কারসাচি চক্রের ইশরায় টানা দরপতন ঘটছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারনের বিকল্প নেই।