শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সরকারী সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের একটা সুরক্ষিত মাধ্যম। তাই সবাই তাদের পোর্টফোলিওর একটি অংশ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারেন৷ যাতে পোর্টফোলিওর একটা অংশ লস হলেও এই বিনিয়োগ সুনিশ্চিতভাবে তার কাছে থেকে যায়৷ বিনিয়োগকারীদের এমন পরামর্শ দিলেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ঝুঁকি বিন্যাস করণে এটা এভাবে ব্যবহৃত হলেও পূর্বে আমাদের পুঁজিবাজারে সরকারী সিকিউরিটিজ না থাকার কারণে দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ঝুঁকি অনেক বেশী ছিল৷ তিনি বলেন, আব্দুর রউফ তালুকদার বংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পর সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেনে ভিন্ন মাত্রার গতি আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বুধবার (০৩ নভেম্বর) সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাইমারি ডিলারদের অংশগহণে “স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে সরকারী সিকিউরিটিজের লেনদেন” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক এম আনোয়ার হোসেন, সিডিবিএল এর মহাব্যবস্থাপক মাইনুল হক এবং ডিএসই’র প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান সাইদ মাহমুদ জুবায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই উদ্ভাবনী ও দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় শেয়ারবাজারকে অধিকতর সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে পণ্যে বৈচিত্রতা আনতে কাজ করছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেনে গতি আনতে স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছে কমিশন। এরপর আব্দুর রউফ তালুকদার বংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে আসার পর সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনে নতুন করে গতি সূচিত হয়েছে।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজ ২০ দিনে মাত্র ৮টি লেনদেন হয়েছে৷ কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে চাহিদার ও যোগানের মধ্যে একটা পার্থক্য বা গ্যাপ রয়ে গেছে৷ এক্ষেত্রে সমস্যা হল সঠিক প্রচারণার মাধ্যমে এর চাহিদা তৈরী করা হয়নি৷ যার ফলশ্রুতিতে প্রথম দিনের লেনদেনের পরেই বিও আইডি দিয়ে লেনদেন করতে হলে বিএসইসি ও ডিএসই’র অনুমোদন নিতে হবে মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার আসলে কোন ভিওি নেই৷

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের অন্যান্য লেনদেনের মতই একই পদ্ধতিতে এক্ষেত্রেও লেনদেন হয়৷ চাহিদা তৈরী করতে আমাদের অনেক প্রচারণা মূলক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যাংকের দেয়া একটা বন্ড ব্যর্থ হওয়ার কোন কারণ নেই৷ এটা সাধারণ বিনিয়োগকারীগনের সঠিক প্রচারণার মাধ্যমেই বুঝাতে হবে৷

ড. শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও নিয়েছি৷ যার ধারাবাহিকতায় বিআইসিএম, ডিএসই এবং সিএসইও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে৷ এক্ষেত্রে লেনদেনের পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ যদি দেয়া যায় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীগন সরকারী সিকিউরিটিজ এই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন৷ আর যোগান বা সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে এই পর্যন্ত যে সমস্ত বন্ড ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো বিপিআইডি হোল্ডারাই হোল্ড করেন৷ সেটার একটা অংশ যদি এই মার্কেটের মাধ্যমে সঞ্চালন করা যায় তাহলে শেয়ারবাজার আরও প্রাণবন্ত হবে৷

পরে ব্যাংকের প্রাইমারি ডিলারগণ স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনের প্রধান চ্যালেঞ্জসমুহ যেমন-বাংলাদেশ ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সেটেলমেন্টের পার্থক্য, বন্ড ও এর মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে ব্রোকারেজ হাউজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, কর বিষয়ক সমস্যা, ব্রেকারেজ কমিশন, সার্কিট ব্রেকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের জন্য বাজার মূল্যায়ন সমস্যার চিহ্নিত করন, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানের অভাব, টি+২ ট্রেডিং সেটেলমেন্টের কারণে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের সমস্যা,

বিপিআইডি ও বিও আইডি সিকিউরিটিজ ট্রান্সফার ইস্যু, তারল্যের উপর ভিত্তি করে সরকারি সিকিউরিটিজের বেঞ্চমার্কিং না থাকা৷ মেয়াদপূর্তি ভিত্তিতে সমস্ত গর্ভমেন্ট সিকিউরিটিজ ব্যতীত বন্ড বিষয়ে পুঁজিবাজারে সীমিত ব্যাংক এক্সপোজার এবং ব্যাংক নিলাম ও সেকেন্ডারি ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আন্ডাররাইটিং কমিশন ইত্যাদি বিষয়ে ডিলারগণ আলোচনা করেন৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক এম. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারী সিকিউরিটিজ লেনদেনের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত। তিনি সকলকে আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা শুরু করুন তাহলেই এই প্লাটফর্মে সরকারী সিকিউরিটিজের ব্যাপকতা ও প্রসারতা বৃদ্ধি পাবে।