শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিএসইসি-আইএমএফের বৈঠককে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আইএমএফের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠককে কেন্দ্র করে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেন, ‘আগামী ৭ নভেম্বর আইএমএফ আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে। সম্ভবত বন্ড নিয়ে আলোচনা করবে। এখনও কিছু বলেনি। তবে তাদের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠকের এজেন্ডায় ফ্লোর প্রাইস নেই।

ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আলোচনা করতে পারে কি না এমন প্রশ্নে বিএসইসি প্রধান বলেন, ‘এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না তারা কী নিয়ে আলোচনা করবে। তবে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আলোচনা এটা তাদের (আইএমএফ) এজেন্ডা না। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে কিছু বলতে হলে এটা আইএসকো বলবে। আর আমি আইএসকোতে আছি। সো, এটা নিয়ে তারা কিছু বলবে না।’

আগামী ৭ নভেম্বর বৈঠকের সময় নির্ধারিত হওয়ার পর এই আতঙ্কে ফের দরপতনের পর বিএসইসি’র মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ৭ নভেম্বর আমাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বন্ড বাজারের উন্নয়ন নিয়ে কথা হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর সুশাসন, আর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবকাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এই বৈঠকে পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইজ নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।’

আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থাটি পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। বর্তমানে দরপতন ঠেকাতে ‘ফ্লোর প্রাইস’ নামে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে যে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, সেটি নিয়ে আইএমএফ কথা তুলতে পারে- এ নিয়ে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। এদিন পুঁজিবাজারে চাঙাভাবের আশা করছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না বলে গত ১১ অক্টোবর যে নির্দেশ জারির পর বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছিল, সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএসইসি। তবে ‘আইএমএফ আতঙ্কের’ কাছে হেরে গেছে সেই ‘ভালো খবর’।

সারা বিশ্বে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মোর্চার নাম ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশন্স যা সংক্ষেপে আইএসকো নামে পরিচিত। সেই সংস্থাটিও বাজারে ফ্লোর প্রাইসের মতো হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন শিবলী রুবাইয়াত। তবে বাংলাদেশে ফ্লোর তুলে দেয়ার বিষয়ে তারা কখনও চাপ দেয়নি। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ধস নামলে প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয়। পাশাপাশি ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকে লেনদেন।

ছুটি শেষে মে মাসে লেনদেন শুরু হলে পুঁজিবাজারে ফেরে চাঙাভাব। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। শুরুতে ফ্লোরে থাকা শেয়ারগুলো দর হারালেও পরে দেখা যায় ক্রয়চাপে সেগুলোর দর বেড়েছে।

এবারও ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে বিশ্বমন্দার শঙ্কায় বারবার পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। গত ২৮ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর সেদিন দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়। পর দিন থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়ে উত্থানে ফেরার ইঙ্গিত দেয়। তবে করোনাকালের মতো এবারের উত্থান ভারসাম্য মূল্য ছিল না।

বড়জোর ৩০টি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে সূচক তরতর করে বাড়তে থাকলেও বেশির ভাগ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসেই গড়াগড়ি খেতে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যত বাড়ে, ফ্লোরের কোম্পানির সংখ্যা তত বেশি বাড়তে থাকে।

এ কারণে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার দাবি জানাচ্ছে কোনো কোনো পক্ষ। তবে এই মুহূর্তে অর্থনীতি নিয়ে যে শঙ্কা, তাতে ফ্লোর তুলে দিলে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, এমন কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আর বিএসইসির পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, ফ্লোর প্রাইস থাকবে অনির্দিষ্টকালের জন্য।