শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর লক্ষে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জানিয়েছে । তবে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির ওই আবেদনে বেশ কিছু নথির ঘাটতি পাওয়া গেছে।

একই সঙ্গে কোম্পানিটির বেশ কিছু লেনদেন সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির আবেদন অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি ও ব্যাখ্যা তলব করেছে কমিশন। সম্প্রতি এমারেল্ড অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই-সিএসই) অবহিত করা হয়েছে। এ চিঠিটি জারির ৩০ দিনের মধ্যে কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে ঘাটতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিতে কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে দেখা গেছে, বিগত পাঁচ বছরের অস্থায়ী আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রয়োজন। কোনো পক্ষের সাথে কোম্পানির কোনো স্থগিত মামলা থাকলে তার স্পষ্টীকরণ বা ঘোষণার পাশাপাশি সহায়ক নথি জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

এদিকে দেখা গেছে, কোম্পানির আগের ৬ মাসের গড় বাজার মূল্য ছিল ৩৭.২০ টাকা। কিন্তু আবেদনপত্রে কোম্পানির নতুন ব্যবস্থাপনা মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষে নতুন ইক্যুইটি ইস্যু করতে চায়, যার মূল্য হবে ১০ টাকা। কোম্পানিটি শেয়ার মানি ডিপোজিটকে পরিশোধিত মূলধনে রূপান্তর করবে, যা ন্যায়সঙ্গত নয়। কারণ এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এই অবস্থানে ব্যবস্থাপনার ন্যায্যতা প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

এ ছাড়া শর্ত অনুযায়ী, শেয়ারের টাকা একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে। কিন্তু কোম্পানি জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী শুধুমাত্র একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা করা হয়েছে। কোম্পানি শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে মোট ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকা দাবি করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে কোম্পানির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিএসইসির ইস্যু অফ ক্যাপিটাল ২০০১ বিধিমালার সম্মতি সম্পর্কিত ঘোষণা জমা দিতে হবে। সমস্ত হালনাগাদ করা লাইসেন্সের কপিও জমা দিতে হবে কোম্পানিকে।

উল্লেখিত বিষয়ে সহায়ক নথিসহ কোম্পানিটির ঘোষণা জমা দিতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে- নিবন্ধিত ঠিকানা ও পরিচালক পরিবর্তন হওয়ার তথ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও ব্যবসা পরিবর্তন বা নতুন ব্যবসা শুরুর তথ্য, কোম্পানির শেয়ার দরকে প্রভাবিত করে এমন কোনও পরিবর্তনের তথ্য, পরিচালকদের সর্বশেষ বিস্তারিত তথ্য এবং কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণী।

এদিকে কোম্পানি বলেছে, মোট শেয়ারের অর্থ জমা দিয়েছে ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকা। কিন্তু জমা দেওয়া ব্যাংক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উল্লিখিত অর্থের মধ্যে মিনোরি বাংলাদেশ এমারল্ড অয়েলের অনুকূলে ২ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ডাউন পেমেন্ট দিয়েছে এবং শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে জমা করেছে। এছাড়া আবেদন উল্লেখিত ব্যাংক হিসাবে ৮২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই জমা টাকার বিষয়ে এবি ব্যাংক থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া কোম্পানির বিভিন্ন কার্যক্রমে নগদ লেনদেন দেখা গেছে, যা সন্দেহজনক। তাই সেসব নগদ লেনদেনের বিষয়ে নথি জমা দিতে বলা হয়েছে কোম্পানিকে।

প্রসঙ্গত, এমারেল্ড অয়েল ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তর মাধ্যমে মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। দীর্ঘ দিন লোকসান থাকা ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে ২০১৮ সাল থেকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সর্বশেষ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এরপর থেকেই কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে এমারেল্ড অয়েলের ৭.৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে মিনোরি বাংলাদেশ।

মালিকানায় পরিবর্তন আসলেও পণ্য হিসবে ব্র্যান্ড `স্পন্দন’ নামেই তেল বাজারজাত করছে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হওয়ায় কোম্পানিটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এরপর ওই বছরের ২৮ জুন রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে স্পন্দন রাইস ব্রান অয়েলের মোড়ক উন্মোচন করে এমারেল্ড অয়েল।

ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের নতুন মালিকানায় কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ধানের কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেল বাজারজাত শুরু করে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকার। আর পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

সে হিসেবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩৮.২৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৬.৮৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫৪.৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। রোববার (৩০ অক্টোবর) এমারেল্ড অয়েলে শেয়ার সর্বশেষ ডিএসইতে ৩৬.৪০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।