শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ খাতের মধ্যে মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ব্যাংক খাত। তবে সংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ বস্ত্রখাত। এখাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৮টি। যা শেয়ারবাজারে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ কোম্পানি। বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে তথা ৯ মাসে (জুলাই-’২১ থেকে মার্চ-’২২ পর্যন্ত) মুনাফা বেড়েছে ৩৪টি কোম্পানির। গত বছরের তুলনায় কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ায় এগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা এবছর বাড়তি রিটার্ন আশা করছেন। ফলে ৩৪ কোম্পানির ঘিরে বিনিয়োগকারীরা নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মহামারি করোনা এবং ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের দামামার মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পোশাকের কদর ও চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার নেপথ্যে কাজ করছে প্রবাসী আয় ও বস্ত্রখাতের রপ্তানি আয়। তারা বলছেন, আগের বছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিগুলো যেহেতু মুনাফার ভালো প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে, সেহেতু বাড়তি লভ্যাংশ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর বাড়তি সক্ষমতাও তৈরি হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের অর্থবছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরের ৯ মাসে বস্ত্রখাতে যেসব কোম্পানির মুনাফা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে বিশেষ নজর দিয়েছেন। যে কারণে সাম্প্রতিককালে বস্ত্রখাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামে ও লেনদেনে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা দিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩০ জুন ২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৮টি কোম্পানি লোকসানে ছিল, যেগুলো ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-’২১ হতে মার্চ-’২২) মুনাফায় ফিরেছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, লোকসানে থাকার কারণে আগের বছর বেশিরভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা থেকে বঞ্চিত না করলেও কয়েকটি কোম্পানি লভ্যাংশের মুখ দেখাতে পারেনি।

কোম্পানিগুলো এবার মুনাফায় ফেরায় যেসব কোম্পানিতে গতবছর যৎসামান্য লভ্যাংশ পেয়েছে, এবছর সেগুলোতে বেশি লভ্যাংশ পাবে এবং যেসব কোম্পানি লভ্যাংশের মুখ দেখাতে পারেনি, এবছর সেগুলো হয়তো তাদের লভ্যাংশের মুখ দেখাতে পারবে। এদিকে, আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১২টির কোম্পানির মুনাফা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের প্রত্যাশা অনেক বেশি বেড়েছে।

অপরদিকে, আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১৪টি কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। এসব কোম্পানিতেও এবছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের প্রত্যাশা বেড়েছে। লোকসান থেকে মুনাফায় ফেরা ৮ কোম্পানি সমাপ্ত অর্থবছরে মুনাফায় ফেরা আট কোম্পানি হলো-অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশ গার্মেন্টস, জেনারেশন নেক্সট, হামিদ ফেব্রিকস, প্রাইম টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, সোনাগাঁ টেক্সটাইল ও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত বছর লোকসানে থেকেও জেনারেশন নেক্সট ও সোনারগাঁ টেক্সটাইল ছাড়া বাকি ৬টি কোম্পানিই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ গত বছর লভ্যাংশ দিয়েছে ১ শতাংশ নগদ, দেশ গার্মেন্টস ৫ শতাংশ নগদ, হামিদ ফেব্রিকস ৫ শতাংশ নগদ, প্রাইম টেক্সটাইল ২ শতাংশ নগদ, সাফকো স্পিনিং ৫ শতাংশ নগদ এবং শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আড়াই শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ১১ পয়সা লোকসানের বিপরীতে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ১৫ পয়সা, দেশ গার্মেন্টস ২৬ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ৮৮ পয়সা, জেনারেশন নেক্সট ৩ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ৩ পয়সা, হামিদ ফেব্রিক্স ১ টাকা ৩১ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ৩৮ পয়সা,

প্রাইম টেক্সটাইল ২ টাকা ১২ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ৪৮ পয়সা, সাফকো স্পিনিং ৪ টাকা ৩১ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ১৩ পয়সা, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ৭৭ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ১ টাকা ১ পয়সা এবং সোনারগাঁ টেক্সটাইল ১ টাকা ২৯ পয়সা লোকসানের বিপরীতে মুনাফা করেছে ২৪ পয়সা।

আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঢাকা ডাইংয়ের শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ছিল ৪৭ পয়সা, বিপরীতে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ৭৯ পয়সা, এনভয় টেক্সটাইলের ৫৮ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ১২ পয়সা, ফারইস্ট নিটিংয়ের ৩৩ পয়সার বিপরীতে ৮২ পয়সা, ম্যকসন্স স্পিনিং ১ টাকা ১৫ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ৫৯ পয়সা, মতিন স্পিনিং ৪ টাকা শূন্য ৩ পয়সার বিপরীতে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা, মোজাফ্ফর হোসেন ১২ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ৭১ পয়সা,

মুন্নু ফেব্রিক্স শূন্য ৪ পয়সার বিপরীতে ১০ পয়সা, সায়হাম টেক্সটাইল ৬৪ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ২১ পয়সা, শাশা ডেনিম ৬৩ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ৪৫ পয়সা, স্কয়ার টেক্সটাইল ১ টাকা শূন্য ৫ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ৪৭ পয়সা, তমিজ উদ্দিন ৯৮ পয়সার বিপরীতে ৪ টাকা ২৪ পয়সা এবং তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৫ পয়সার বিপরীতে ৭৭ পয়সা।

কোম্পানিগুলো মধ্যে গতবছর লভ্যাংশ দিয়েছিল ঢাকা ডাইং ২ শতাংশ নগদ, এনভয় টেক্সটাইল ৫ শতাংশ নগদ, ফারইস্ট নিটিং ১০ শতাংশ নগদ, ম্যাকসন্স স্পিনিং ১১ শতাংশ নগদ, মতিন স্পিনিং ৪০ শতাংশ নগদ, মোজাফ্ফর হোসেন ৩ শতাংশ নগদ, মু্ন্নু ফেব্রিক্স ১ শতাংশ নগদ, সায়হাম টেক্সটাইল ১০ শতাংশ নগদ, শাশা ডেনিম ১০ শতাংশ নগদ, স্কয়ার টেক্সটাইল ২০ শতাংশ নগদ, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইল ২০ শতাংশ নগদ, এবং তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ আড়াই শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ।

আগের অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ইপিএস ছিল ১ টাকা শূন্য ৬ পয়সা, বিপরীতে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা, আলিফ ম্যানুফেকচারিংয়ের ইপিএস ছিল ৩৮ পয়সার বিপরীতে হয়েছে ৪৪ পয়সা, এ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের ২ টাকা ৫১ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ৬৮ পয়সা, ড্রাগন সোয়েটারের ৯২ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা, এস্কয়ার নিটের ১ টাকা ৮৩ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ১৫ পয়সা, এইচআর টেক্সটাইলের ১ টাকা ৭৫ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ২৬ পয়সা,

হাওয়েল টেক্সটাইলের ১ টাকা ৯১ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ৬৭ পয়সা, কাট্টলী টেক্সটাইলেল ৯০ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা শূন্য ৫ পয়সা, মালেক স্পিনিংয়ের ১ টাকা ৯৮ পয়সার বিপরীতে ২ টাকা ৯১ পয়সা, মেট্রো স্পিনিংয়ের ৬২ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা শূন্য ১ পয়সা, নিউ লাইন টেক্সটাইলের ১ টাকা ২৭ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ৬০ পয়সা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ৩ টাকা ২৪ পয়সার বিপরীতে ৩ টাকা ৯২ পয়সা, কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ৮০ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ১২ পয়সা এবং ভিএফএস থ্রেডের ১ টাকা ২৭ পয়সার বিপরীতে ১ টাকা ৪০ পয়সা ইপিএস হয়েছে।

কোম্পানিগুলো মধ্যে গতবছর লভ্যাংশ দিয়েছিল আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ১০ শতাংশ নগদ, আলিফ ম্যানুফেকচারিং ২ শতাংশ নগদ, এ্যাপেক্স স্পিনিং ২০ শতাংশ নগদ, ড্রাগন সোয়েটার ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, এস্কয়ার নিট ১৫ শতাংশ নগদ, এইচআর টেক্সটাইল ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, হাওয়েল টেক্সটাইল ২০ শতাংশ নগদ, কাট্টলী টেক্সটাইল ১০ শতাংশ নগদ, মালেক স্পিনিং ১০ শতাংশ নগদ, মেট্রো স্পিনিং ৫ শতাংশ বোনাস, নিউ লাইন টেক্সটাইল সোয়া ১২ শতাংশ নগদ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ২০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস এবং ভিএফএস থ্রেড ১১ শতাংশ নগদ।