শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এমনকি তার ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগাতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানির কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। কিন্তু কারসাজিতে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সাকিব ও তার প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীসহ প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছে। কমিশনের মতে, তদন্ত কার্যক্রমে সাকিবের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু কারসাজিকারীর সঙ্গে তার যোগসাজশ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সময় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য অনেককেই সন্দেহের তালিকায় নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের সবাই যে কারসাজিতে জড়িত থাকবেন, এমনটি নয়।

একাধিক যাচাই-বাছাই করে, প্রকৃতপক্ষে যারা শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত; তাদের চিহ্নিত করে জরিমানা করা হয়েছে। আর অন্যদের এই তদন্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। শেয়ার কারসাজির সাথে তার কোনও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এজন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ যখন তদন্ত হয় তখন সন্দেহ অনেককেই করা হয়, কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে যার নাম থাকবে তাকেই দোষী বা শাস্তি দেওয়া যায়। সাকিব আল হাসানের নামে কোনও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হয়নি। তাই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির নির্দেশে গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে (১৫ দিন) ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি তদন্ত করেছে ডিএসই। তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পায় ডিএসই। এই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিএসইসি আবুল কালাম মাতব্বর ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে কারসাজির বিষয়ে জানতে শুনানিতে আহ্বান করে। তাদের পক্ষে গত ৫ জুন শুনানিতে আবুল খায়ের হিরো বক্তব্য দাখিল করে।

একইভাবে বিএসইসির নির্দেশে চলতি বছরের ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চ তিনদিনে বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি তদন্ত করে ডিএসই। তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পায় ডিএসইর। এই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিএসইসি আবুল কালাম মাতাব্বর এবং তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে কারসাজির বিষয়ে জানতে শুনানিতে আহ্বান করে। শুনানিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে আবুল খায়ের হিরো বক্তব্য দাখিল করে।

দুইটি বক্তব্য থেকেই কারসাজির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭ (ই) (ভি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন আইন ১৯৯৩ এর ধারা ১৮ লঙ্ঘন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আবুল কালাম মাতব্বর এবং তার সহযোগীদের ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড, এবং তার সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কিন্তু সাকিব আল হাসান শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েছে এমন খবরে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা শুভেচ্ছাদূতের এমন কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ণ হচ্ছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন। অনেকেই করছেন বাজে মন্তব্য। মূলত বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাকিবকে নিয়ে ‘মনগড়া ও অসত্য খবর’ প্রকাশিত হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।

এমনকি, মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের পরিকল্পনার ব্যাপারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন নাজমুল হাসান পাপন। এসময় শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের জড়িত থাকা নিয়ে প্রশ্ন শুনে ‘হতভম্ব’ হন বিসিবি বস। তিনি বলেন, ‘বলেন কী! আমি তো এ ব্যাপারে জানি না। ওটা যেহেতু ক্রিকেটের সঙ্গে না, এখন আমি কী করব? এ বিষয়ে আমি জানি না। যদি ক্রিকেটের সঙ্গে হতো তাহলে কথা ছিল।’

বলে রাখা ভালো যে, সম্প্রতি সাকিব আল হাসান মোনার্ক হোল্ডিং নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজের (শেয়ার কেনাবেচা হাউজ) লাইসেন্স কিনেছেন। এভাবেই সাকিব শেয়ার ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কারসাজির লক্ষে ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে ৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায়।

এক পর্যায়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম লোকসানের শিকার হন। কোম্পানি হলো- ওয়ান ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম অনলাইন ও ফরচুন সুজ। এই ৭ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে যে চক্রটি ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে; সার্বিক দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সহযোগীদের ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।