শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেষ দুই ঘণ্টায় শেয়ার বিক্রির চাপে ডিএসই’র মূল্য সূচক কমেছে ৫০ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৬৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আগের দিনের শেষ বেলায় বিক্রির চাপের সূচক পিছুটান আভাস দিয়েছিলো আজ সূচকের পতন হতে পারে। সে আভাস সত্যিও হল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের এমন বড় পতনের পেছনে চার কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে প্রথমত, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর ক্যাপিটাল গেইন ইস্যু: পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজ কেনা-বেচার উপর ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অর্জিত মূলধনি আয় করমুক্ত ছিল, কিন্তু এখন থেকে করারোপ করা হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারবাজারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আগামী অর্থবছরের জন্য প্রকাশিত আয়কর পরিপত্র নিয়ে এমন বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও এনবিআর।

এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে বিএসইসি জানিয়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ে শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত আয় করমুক্তই থাকছে। ওইটা ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রজোয্য বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর এর ধোঁয়াশার কারণে বাজারের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আজকে বাজার অনেকখানি পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়।

দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময়হার এক দিনে ১০ টাকা বড় হওয়ার প্রভাব। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, টাকার বড় দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদন খাত। আমদানি করা কাঁচামালের দাম বেড়ে যাবে ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা দেশে পণ্যের মূল্য আরও বাড়লে চাহিদা কমে গিয়ে বিক্রিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এতে কোম্পানির মুনাফা কমে যেতে পারে। টাকার মান কমার ফলে, এই আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইছেন।

তৃতীয়ত, শেয়ারবাজারের মৌল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে পতন হয়েছে। যার কারণে সূচকের এমন বড় পতন হয়েছে। মৌল ভিত্তির কোম্পানিগুলোর মধ্যে আজ সবচেয়ে বেশি শেয়ারদর কমতে দেখা গেছে বেক্সিমকো লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম, বেক্সিমকো ফার্মা এবং ইউনাইটেড পাওয়ার, আইসিবি, ইসলামী ব্যাংক ও ওরিয়ন ফার্মা।

চতুর্থত, আজ দেশের গণমাধ্যমে শেয়ার কারসাজির সাথে সাকিবের জড়িত থাকার খবর নেতিবাচক ধারায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়েছেন। সাকিব-হিরোর বিরুদ্ধে বিএসইসির একের পর এক সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা বিভ্রান্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা মনে করছেন, বিএসইসির এমন পদক্ষেপে সাকিব হিরোর সহযোগিরা বাজার থেকে ছিটকে যাবে। এতে করে তাদের এন্ট্রি নেওয়া শেয়ারগুলোর পতন হতে পারে। সেই আতঙ্কে বাজারে সেল প্রেসার বেড়েছে।

এছাড়াও, আজ বড় বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেসার ছিল বেশি। সেল প্রেসারের চাপে কেনাবেচা কম হয়েছে। এতে বাজারে লেনদেনও কমেছে। আজ ডিএসইর লেনদেনও কমেছে আগের দিনের তুলনায় ১৭২ কোটি টাকার বেশি। শুধু বড় বিনিয়োগকারীরা সেল প্রেসার দিয়েছে তা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আজ তেমন একটা সক্রিয় ছিল না। আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০.৪১ পয়েন্ট বা ০.৭৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮৭.১৭ পয়েন্টে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৯.৪২ পয়েন্ট বা ০.৬৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২০.২৭ পয়েন্ট বা ০.৮৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১৭.৫২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৩৩.২৩ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন এক হাজার ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যা আগের দিন থেকে ১৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা কম।

আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪৮০ কোটি ৭ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭২টির বা ১৯.৪১ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১৭৫টির বা ৪৭.১৭ শতাংশের এবং ১২৪টির বা ৩৩.৪২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬৪.৬৫ পয়েন্ট বা ০.৮৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ০৬৮.২১ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৬২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৩টির আর ৬৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সিএসইতে ২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।