শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করা হলেও বেশ কিছু কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ড অবণ্টিত বা অদাবিকৃত নগদ এবং বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করেনি। যেসব কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সিএমএসএফে লভ্যাংশ স্থানান্তর করেনি তাদের কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ সারংক্ষেপ প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এখনও কি পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ চিহ্নিত করা হয়নি এবং নগদ এবং বোনাস লভ্যাংশ পৃথকভাবে ভাগ করার জন্য সিএমএসএফকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অব অপারেশনের (সিওও) কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দেওয়া নির্দশনা অনুযায়ী গত ৩১ জুলাই কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রদানের সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হয়েছে। কঠোর শাস্তির হুশিয়ারী সত্বেও সিএমএসএফে অর্থ ও শেয়ার জমাদানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া যায়নি।

ফলে ফান্ডটির অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট কমিটি (এএএমসি) ও বিএসইসি কোম্পানিগুলোর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে এখনও কিছু কিছু কোম্পানি অদাবিকৃত লভ্যাংশ সিএমএসএফে জমা দিচ্ছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির চিঠি পাওয়ার পরপরই যেসব কোম্পানি এখনও তাদের কাছে রক্ষিত অবন্টিত বা অদাবিকৃত লভ্যাংশ জমা দেয়নি তাদেরকে চিঠি দিয়েছে সিএমএসএফ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি ওই চিঠির জবাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। তবে কিছু কোম্পানি সিএমএসএফর চিঠির জবাব এখনও দেয়নি। আর কিছু কোম্পানি শিগগিরই চিঠির জবাব দিবে বলে জানিয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর প্রদান করা ব্যাখ্যা একত্রিত করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ প্রতিবেদন আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অবণ্টিত বা অদাবিকৃত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সিএমএসএফে স্থানান্তর না করার বিষয়ে অসম্মতিকারী কোম্পানির ব্যাখ্যা সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। আর সকল প্রাসঙ্গিক নথিপত্রসহ প্রত্যেকটি কোম্পানির ব্যাখ্যার সারাংশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

একইসঙ্গে অজ্ঞাত নগদ লভ্যাংশের পরিমান পরিমাণ চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি ৯ (১) (২) (৩) অনুসারে নগদ এবং বোনাস পৃথকভাবে ভাগ করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি ৯(৫) এর অধীনে এ চিঠি জারি করার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে এসব তথ্য প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমএসএফের চিফ অব অপারেশন ও অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মনোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা বিএসইসির চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিগুলোকে অবহিত করেছি। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি ব্যাখ্রা প্রদান করেছে। কিছু কোম্পানি শিগগিরি ব্যাথ্যা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে।

আবার কিছু কোম্পানি কোনো রেসপন্স করেনি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর ব্যাখ্যা সম্বলিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করব। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ আগস্ট পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও তারল্য সংকট দূর করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এ বোর্ড অব গভর্নসের মধ্যে ৪টি পদ বিএসইসি কর্তৃক নিয়োগ নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি ৩টি সদস্য পদ। এ ফান্ডটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আরো তিন জন সদস্য হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এছাড়াসিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নসের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল,

সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া চিফ অব অপারেশন হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মনোয়ার হোসেনকে মনোনয় দেয় বিএসইসি।