শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এমন সময় তিন ইতিবাচক খবরে হঠাৎ পুঁজিবাজারে ইউর্টান শুরু হয়েছে। তবে লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় সূচক বৃদ্ধিতে বড় ধরনের দরপতন থেকে রক্ষা পেল দেশের পুঁজিবাজার। শুধু তাই নয়, টানা ৯ কর্মদিবস দরপতনের পর আজ পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, বেড়েছে সূচক ও লেনদেন। গত ১২ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত টানা ৯ কর্মদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোমবার বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়, যা অব্যাহত ছিল বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার কিনে মার্কেট সাপোর্ট দেওয়া শুরু করে। আইসিবি শেয়ার কেনার প্রবণতা বাড়ায় লেনদেনের শেষ দেড় ঘণ্টায় সূচক বাড়ে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এদিন ওষুধ ও রাসায়নিক খাত ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করার বৈঠকের খবর দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণসহ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে খবর প্রকাশের পর বাজার ঘুরে যায় এবং আধা ঘন্টার মধ্যে বাজার ইতিবাচক প্রবনতায় ইউটার্ন নেয়।

এরপর থেকেই দুপুর সোয়া ১২টায় বাজার ইতিবাচক প্রবণতায় ফেরার পরও আবার নেতিবাচক প্রবণতায় টার্ন নেয়। এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চাপ বাড়তে দেখা যায়। লেনদেনেও ভালো গতি দেখা যায়। ফলে বাজার ফের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ধাবিত হয়। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। লেনদেনের শেষ পর্যায়ে সূচক ৪৮ পয়েন্টের বেশি বেড়ে যায়। তবে অ্যাডজাস্টমেন্টের কারণে সূচক বৃদ্ধি ৩০ পয়েন্টে স্থির হয়।

প্রথমত, পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার বৈঠক ডেকেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা (এক্সপোজার), কস্ট প্রাইজ ও বন্ডকে কোন পদ্ধতিতে এক্সপোজার সীমা থেকে বাইরে রাখা যায়, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এই খবরে বাজার টানা ৯ কার্যদিবস পতনের পর বড় পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। যেখানে সকাল বেলায় সূচকের ৬৫ পয়েন্টের বেশি খোয়া যায়, সেখানে দিনশেষে ৩০ পয়েন্টের বেশি সূচকের উত্থান হয়।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার ক্রয়ের খবরে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পুঁজিবাজার কে স্থিতিশীল রাখতে আইসিবি মার্কেট সাপোর্ট দেওয়া শুরু করে। আইসিবি শেয়ার ক্রয়ের প্রবণতায় ওষুধ ও রাসায়ন খাত ও বস্ত্র খাতের এবং প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার।

তৃতীয়ত, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মার্কেট মেকারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করছেন। এমন খবরে গতকাল দুপুরে পুঁজিবাজার ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে সূচকের বড় দরপতন থেকে কিছুটা দিনশেষে উত্থান হয়। ডিএসই লেনদেনের শেষ ভাগে শেয়ার বিক্রয়ের চেয়ে ক্রয়েরর প্রবনতা বেশি ছিল। এছাড়া পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক মন্দা কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসাবে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের কাছে খবর রয়েছে, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা অর্থ বা ক্যাপিটালের অপব্যবহার করেছে। ফলে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে দেখছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীকাল মঙ্গলববার বৈঠকে যদি পজিটিভ কিছু আসে তাহলে পুঁজিবাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবো। ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস হতে ১৬৮ কোটি ৯৮ টাকা বেশি। আগের কার্য দিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ লাখ টাকা। ডিএসইতে আজ ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২ টির বা ১০.৯৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩১৮ টির বা ৮৩.২৫ শতাংশের এবং ২২ টির বা ৫.৭৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১১৫.৩৭ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯২২.৮৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৭৬ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১১ টির কমেছে ১২৯ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির দর। আজ সিএসইতে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।