শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে দুই বাজারেই কমেছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইউনিটের দাম। এমনকি ডিএসইতে ২০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া নয় কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

ঈদের পর থেকেই শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ঘটেলেও সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গত সোমবার (১৮ জুলাই) সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

সরকারের এমন ঘোষণা আসার পর সোমবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। একই সঙ্গে চরম ক্রেতা সংকটে পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। মঙ্গলবারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। পরের দুই কার্যদিবস বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ফেরায় দরপতনের মাত্রা কিছুটা কমে। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজারে।

এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই ক্রেতা সংকটে পড়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ফলে লেনদেন শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩০ পয়েন্টের ওপরে পড়ে যায়। ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের।

লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়তে থাকে ক্রেতা সংকট। ফলে লেনদেনের শেষ দিকে এসে ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ দিতে থাকেন। কিন্তু যে হারে বিক্রির আদেশ আসতে থাকে তাতে ক্রেতা না থাকায় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ তাদের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারেননি।

এমন ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৮টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫২ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৭৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২০৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মতিন স্পিনিংয়ের ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেডিএস এক্সেসরিজ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- প্রাইম টেক্সটাইল, ফরচুন সুজ, সাফকো স্পিনিং, সোনালী পেপার, ন্যাশনাল ব্যাংক, শাহিনপুকুর সিরামিক এবং ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭৭ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৬৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৭টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পচা শেয়ারের দাপট: ক্রেতা সংকটে পড়ে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হলেও, এই পতনের বাজারে দাপট দেখিয়েছে পচা ‘জেড’ গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠান। লোকসানে পড়ে বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারা এ পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো- মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ।

বছরের পর বছর এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ না পেলেও রোববার পুঁজিবাজারে বড় দরপতনের মধ্যে এ পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি লেনদেনের বেশিরভাগ সময় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে।