স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিহীন বা অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) স্থানান্তর করেনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)।

তাই, দাবিহীন বা অবণ্টিত এ লভ্যাংশ দেওয়ার লক্ষ্যে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে কোম্পানিটি। তবে, বিএটিবির এ আবেদন তাৎক্ষণিক মঞ্জুর না করে যথাসময়ে তা পরিপালন না করার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সম্প্রতি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ জুন দাবিবিহীন লভ্যাংশ সিএমএসএফে স্থানান্তর বিষয়ে সময় বাড়ানোর আবেদন জানায় বিএটিবি।

আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যথাসময়ে দাবিবিহীন লভ্যাংশ সিএমএসএফে স্থানান্তর না করার কারণ ব্যাখ্যা করতে কোম্পানিটিকে নির্দশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দাবিবিহীন লভ্যাংশ সম্পর্কিত তথ্য ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ১১(২) ধারার অধীনে সিকিউরিটিজ নির্দেশনা অনুযায়ী দাবিহীন স্টক লভ্যাংশ সিএমএসএফে হস্তান্তর না করার কারণে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র ও নথিপত্রসহ ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিএটিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ জারির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

এছাড়া, কোম্পানিটির কাছে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জারি করা কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ দিন আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কি না এবং তালিকাভুক্তির পর থেকে নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বা যেকোনো তহবিল এবং অদাবিকৃত বা অবণ্টিত আইপিও সাবস্ক্রিপশনের অর্থের তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছে বিএসইসি।

কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যবিলাইজেশন ফান্ডে দাবিহীন বা অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়ার যথোপযুক্ত কারণ দর্শাতে পারলেই সময় বাড়ানোর আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

সিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দাবিহীন বা অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে গঠিত সিএমএসএফে এখনো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা জমা হয়নি। এখন পর্যন্ত সিএমএসএফে জমা হয়েছে মাত্র ৭৯৮ কোটি টাকা, যা সর্বমোট ফান্ডের মাত্র ৯.১৫ শতাংশ। অথচ, সিএমএসএফ ফান্ডে জমা হওয়ার কথা ছিল ৮ হাজার ৭১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এর আগে চলতি বছরের গত ১৫ মার্চ এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ৩১ মার্চ দাবিহীন বা অবণ্টিত লভ্যাংশ দেওয়ার শেষ সময়। তবে, কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দাবিহীন বা অবণ্টিত লভ্যাংশ দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ১০ জুন।

প্রসঙ্গত, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পরিচালনার জন্য বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১ প্রণয়ন করেছে। রুলসটি ২০২১ সালের ২৭ জুন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ওই রুলস অনুযায়ী, ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

আর স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরসের মধ্যে ৪টি পদে বিএসইসি নিয়োগ দেবে বলে জানানো হয়। ওই পদগুলোর মধ‌্যে আছে একটি চেয়ারম্যান পদ ও বাকি ৩টি সদস্য পদ। সদস্যরা হলেন: বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

এছাড়া, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের বোর্ড অব গভর্নরসের অন্য সদস্যরা হলেন: ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) স্বতন্ত্র পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজলে বাবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক,

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, দি ইন্সটিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সদস্য এ কে এম দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া, সিএমএসএফের চিফ অব অপারেশন (সিওও) অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মনোয়ার হোসেন।