শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের দিন সামান্য পতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। তবে ঠিক পরের কার্যদিবস সপ্তাহের প্রথম কার্য দিবসে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে।

এদিকে কোম্পানির করপোরেট কর কমানো ছাড়া বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছুই ছিল না। আবার করপোরেট কর কমানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সুবিধাও পুঁজিবাজারের এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানি পাবে না। এ কারণে বাজেট-উত্তর প্রথম কার্যদিবসে বাজেটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজেটকে ঘিরে এবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশ কিছু প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই পূরণ হয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ভর করেছে। বাজেট-উত্তর প্রথম কার্যদিবসে যার প্রভাব সূচক ও লেনদেনে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট উপস্থাপনের দিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৫৮ কোটি টাকা, যা আজ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩৬ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে বাজেটের পর লেনদেন কমেছে ১২২ কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানো। পাশাপাশি লভ্যাংশ আয়ের দ্বৈত কর পরিহার করা। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পক্ষ থেকে লেনদেনের ওপর ধার্য উৎসে কর কমানোও প্রত্যাশা ছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পক্ষ থেকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও চাওয়া হয় বাজারে। কিন্তু এসব দাবির কোনোটিই পূর্ণ হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে শর্ত সাপেক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করের হার কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।

তবে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মুঠোফোন ও সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করপোরেট কর কমানো হয়নি। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই করপোরেট কর কমানোর সুবিধার বাইরে রয়েছে। আবার যেসব কোম্পানি এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য, তাদের অনেকগুলোর পক্ষেই শর্তপূরণ করা কঠিন হবে।

ফলে শেয়ারবাজারের কতগুলো কোম্পানি শেষ পর্যন্ত করপোরেট কর কমানোর সুবিধা নিতে পারবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এ অবস্থায় বলা চলে, বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কার্যকর কোনো সুবিধাই রাখা হয়নি। এর প্রতিফলন আজকের বাজারে পড়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন এরই মধ্যে।

এদিকে আজ প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৮.৮৪ পয়েন্ট বা ০.৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৩১.৪৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১০.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৭৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৭৩ পয়েন্ট বা ০.৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪০৩.০৭ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৩৪.৬৪ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭৫৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩টির বা ১৪.০২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩০৬ টির বা ৮০.৯৫ শতাংশের এবং ১৯টির বা ৫.০৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৩০.৮৩ পয়েন্ট বা ০.৬৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫১ টির, কমেছে ২২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দর। আজ সিএসইতে ২০ কোটি ০৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।