শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশ চলমান লোকসান কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ‘বিদ্যুৎসাশ্রয়ী টেকসই সিলিং ফ্যান প্ল্যান্ট স্থাপন ও ফ্যান উৎপাদন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ নতুন প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইকুইটি হিসেবে বরাদ্দ পাবে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ওই ইকুইটির অর্থ শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করে (পরিশোধিত মূলধন) সরকারের শেয়ার মালিকানা বৃদ্ধি করতে চায় এটলাস বাংলাদেশ।

এরই ধারাবাহিকতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে মতামত চেয়েছে কোম্পানিটি। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ইকুইটি ফান্ডের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করে সরকারের মালিকানা বাড়ানোর বিষয়ে কোম্পানিটিকে সম্মতি জানিয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি এটলাস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, এটলাস বাংলাদেশকে প্রদত্ত ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ইকুইটি ফান্ডের বিপরীতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে সরকারের অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করা যাবে। ফলে, কোম্পানিটিতে সরকারের বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডিং ৫১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৩.৬১ শতাংশে উন্নীত হবে।

তবে, সরকার ও স্পন্সরের বিদ্যমান অংশ অর্থাৎ ৫১ শতাংশ, এ শেয়ারধারণ স্থিতি রাখার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে বাজারমূল্যে বিধি মোতাবেক স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তর করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটলাস বাংলাদেশের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্তে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অব ক্যাপিটাল) রুলস, ২০০১ এবং শেয়ার হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধি-বিধান অনুযায়ী কমিশনের অনুমোদনের নিমিত্তে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।

এদিকে, ইকুইটি ফান্ডের বিপরীতে শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে এটলাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মোড়ল চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের অধীন এটলাস বাংলাদেশ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার ও ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক জনসাধারণ।

কোম্পানিটির চলমান লোকসান কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে ‘বিদ্যুৎসাশ্রয়ী টেকসই সিলিং ফ্যান প্ল্যান্ট স্থাপন ও ফ্যান উৎপাদন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্পটি কিছু মত সাপেক্ষে বিগত ২০১৯ সালের ১ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার টাকার মধ্যে এটলাস বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি তহবিল বা জিওবি ফান্ড থেকে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে বলে ধরা হয়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই জিওবি ফান্ডের ২৮ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার টাকার মধ্যে ঋণের পরিমাণ হবে ১৭ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং ইকুইটির পরিমাণ হবে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ঋণ হিসেবে প্রাপ্য ১৭ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার টাকা ৫ শতাংশ হার সুদে ২০ বছরে বার্ষিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। আর ইকুইটি হিসেবে প্রাপ্য ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এমতাবস্থায়, পরিকল্পনা কমিশনের শর্তাবলী পূরণ করে প্রকল্পের ডিপিপি শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু, শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার আগে ইকুইটি হিসেবে প্রাপ্য ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করে সরকারি মালিকানা ৫১ শতাংশ থেকে উন্নীত করা যাবে কি না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তাই, ইকুইটি হিসেবে প্রাপ্য ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা শেয়ার মূলধনে রূপান্তর করে সরকারি শেয়ারের মালিকানা ৫১ শতাংশ থেকে উন্নীত করা যাবে কি না, সে বিষয়ে আপনাদের মতামত দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এটলাস বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব সঞ্জয় কুমার দত্ত বলেন, ‘আমরা একটি প্রজেক্ট দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। সে প্রজেক্টে সরকারি ইক্যুইটি বৃদ্ধি করা যায় কি না, সে বিষয়ে কমিশনের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ইক্যুইটি বৃদ্ধি করা যাবে।’

প্রসঙ্গত, এটলাস বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৮ সালে। বর্তমানে কোম্পানি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ১০৮টি।

এর মধ্যে সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬.৬২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩২.৩৮ শতাংশ শেয়ার আছে। কোম্পানিটি বিগত ৫ বছর ধরে লোকসানে আছে। সোমবার (২১ মার্চ) এটলাস বাংলাদেশের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১১২ টাকা ৮০ পয়সায়।