শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি আরামিট সিমেন্ট মুনাফা থাকা স্বত্বেও লভ্যাংশ না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে কোম্পানির পরিচালকরা। ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো মুনাফা করতে পারলেও এবারও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তেমনি কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।

কোম্পানিটি সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও লোকসান দিয়েছিল শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩২ পয়সা। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৯ পয়সা আয় করতে পারে। এরপর তৃতীয় প্রান্তিকে আয় হয় আরও ৭২ পয়সা। তিন প্রান্তিক শেষে শেয়ারে ৪৮ পয়সা মুনাফা হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা চতুর্থ প্রান্তিকের আয় যোগ হওয়ায় লভ্যাংশের প্রত্যাশায় ছিলেন।

এদিকে আরামিট সিমেন্ট ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানি হওয়া স্বত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোঘণা করায় সবার মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন সরকারসহ নীতি নির্ধারকীমহল যেখানে পুঁজিবাজার ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে, সেখানে আরামিট সিমেন্ট কোম্পানি মুনাফা থাকা স্বত্বেও কিভাবে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। এ কোম্পানির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ কমিটি গঠন করে তদন্ত করা দরকার।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেছেন, আরামিট সিমেন্ট ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করেছে। আর যদি প্রতারনা না করে তা হলে নো ডিভিডেন্ডের কারন কি? যেখানে কোম্পানি লাভে রয়েছে সেখানে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার কোন কারন দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্রা লাভ করে ও কোম্পানিগুলো বছরে ডিভিডেন্ড দেয়। এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পুঁজিবাজারের এ দু:সময়ে আরামিট সিমেন্টমতো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছে। বিনিয়োগকারীরা স্মরনকালের ধ্বস কাটিয়ে উঠতে না উঠতে নো ডিভিডেন্ড ঘোষনায় মেতে উঠছে। ভবিষ্যতে কোম্পানিটি কেমন করবে সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে আমি তাদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, আরামিট সিমেন্টের ০.৬০ পয়সা ইপিএস শর্তেও নো ডিভিডেন্ড পরিচালকদের জঘন্যতম কারসাজি ছাড়া আর কিছু না। এমন হীন মানষিকতা এবং হীন কর্মকাণ্ডের জন্য ডিসেম্বর ক্লোজিং সকল শেয়ারই কমবেশী আক্রান্ত হবে। ডিভিডেন্ড প্রদানে সঠিক কোন নিয়মনীতি না থাকায় পরিচালকরা নিজেদের হীন স্বার্থে ইচ্ছামত ন্যুনতম ডিভিডেন্ড বা নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এসব অনিয়ম দেখেও বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে।

মুনাফায় ফেরায় লভ্যাংশের আশায় কোম্পানিটির শেয়ার দরে গত এক বছরে উল্লম্ফন হয়েছে। এই সময়ে শেয়ারদর সর্বনিম্ন ১৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তবে সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে কিছুটা কমে লভ্যাংশ ঘোষণার দিন দাম দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ১০ পয়সা।

গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। পরে অবশ্য দাম কমে। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন শেয়ার দর ছিল ৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। কোম্পানিটি মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি সম্পদমূল্যও বেড়েছে। গত বছর জুন শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদ ছিল ২৭ টাকা ৯১ পয়সার। এবার তা হয়েছে ২৯ টাকা ১৩ পয়সা।

এর মধ্যে ২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৯৭ পয়সা, পরের বছর শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ৫৬ পয়সা, ২০১৯ সালে শেয়ারে ৫ টাকা ১৫ পয়সা এবং গত বছর একেকটি শেয়ারের বিপরীতে ৬ টাকা ৮৬ পয়সা লোকসান দেয়ার তথ্য আছে ডিএসইতে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে। তবে এবারের আর্থিক প্রতিবেদনে গত বছরের লোকসান দেখানো হয়েছে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ৭১ পয়সা। এবার শেয়ারে মুনাফা হয় ৬০ পয়সা। গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

লভ্যাংশ না পেলেও শেয়ারপ্রতি ৬০ পয়সা আয় করতে পারাটাই এই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পেতে পারেন। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৯৭ পয়সা,

পরের বছর শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ৫৬ পয়সা, ২০১৯ সালে শেয়ারে ৫ টাকা ১৫ পয়সা এবং গত বছর একেকটি শেয়ারের বিপরীতে ৬ টাকা ৮৬ পয়সা লোকসান দেয়ার তথ্য আছে ডিএসইতে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে। কোম্পানিটি লভ্যাংশসংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করেছে আগামী ২৪ নভেম্বর। লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর।