শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা ছয় দিন দরপতনের পর সপ্তম দিনে যখন পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিল, সে সময় একটি ব্রোকারেজ হাউসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।মঙ্গলবার ওই হাউসের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। আর দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উত্থানে থাকার পর বড় পতনের পেছনে এটি একটি কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্থানে থাকা পুঁজিবাজার গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধনে যায়। তবে গত সপ্তাহ থেকেই বাজারের আচরণ ছিল কিছুটা অস্বাভাবিক। হঠাৎ করেই শুরু হয় টানা পতন।

গত ১৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ছয় দিন পতন হয়েছিল। একইভাবে টানা ছয় দিন সূচক পতনের পর সোমবার রাতেই পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনদের আলোচনার জন্য ডাকে বিএসইসি। সংস্থাটির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিকেলে এই বৈঠক হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ে। এই বৈঠকের দিনও বড় দরপতন হয়েছে বাজারে। এ নিয়ে টানা সাত দিনে সূচক পড়ল ৩৪৭ পয়েন্ট। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজকে সকালবেলায় একটি ব্রোকার হাউস থেকে ব্যাড প্লে করা হয়েছে। তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। মার্কেট প্রথমে ভালো থাকলেও পরে এ জন্য আর টেকেনি। এটার তদন্ত করে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ওই হাউসের নাম কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নামটা কী, মিটিংয়ে সেটা বলা হয়নি।’

বিএসইসির কমিশনার শেখ শাসমুদ্দিন আহমেদও হাউসটির নাম বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এটা সেনসেটিভ বিষয়। এই মুহূর্তে নাম ডিসক্লোজ না করাই ভালো।’ বৈঠকে শরিফ আনোয়ার হোসেন ছাড়াও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছাইদুর রহমান, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের সিইও সুমন দাশ, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিনিধিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি মহল পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুজব ছড়াচ্ছে। এই বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।’ বিনিয়োগকারীদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পুঁজিবাজারের জন্য আমরা কাজ করছি, চেয়ারম্যানও কাজ করছেন। কোনো ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠী যদি পুঁজিবাজারের কারসাজি করতে চায় বা ক্ষতি করতে চায়… আমরা এখন অনেক শক্তিশালী, আমরা এখন আইডেনটিফাই করতে পারি।’

শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, তারা জানতে পেরেছেন যে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন- এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই। গুজব হিসেবে যা ছড়ানো হয়েছে, সেটি হলে পুঁজিবাজারের জন্য বরং ভালো হবে। কারণ, মহলটি ছাড়িয়েছে যে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হবে।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের মতবিরোধ আছে। অবণ্টিত লভ্যাংশ ও আমানতের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটি নিয়েও আমাদের মতপার্থক্য আছে। আমাদের চেয়ারম্যান যদি ওখানে যান, তাহলে এটা তো আমাদের আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না। তাহলে তো সেটা পুঁজিবাজারের জন্য আরও ভালো হবে, আরও সৌভাগ্যের বিষয় হবে। ‘এটা তো লুকোচুরির কিছু নয়। এটা নিয়ে গুজব ছড়ানোর কিছু নেই।’

বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি শুভ সংবাদও দেন বিএসইসি কমিশনার। বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার যে তহবিল করা হয়েছিল, সেটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেটি সরকারকে আর ফেরত দেয়া লাগবে না। নতুন করে ব্যবহার করা যাবে।’

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে এখন পর্যন্ত কত টাকা জমা পড়েছে, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক কোম্পানি এখন অবণ্টিত লভ্যাংশ বিতরণ করার কথা জানাচ্ছে। তাদেরও আমরা ধরব। আগে কেন দিলেন না, এখন কোথায় পাচ্ছেন লোকদের। এ বিষয়টিও তদন্ত হবে।’

বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘বাজারে তারল্য বাড়ানোর জন্য আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী বন্ড ইস্যু করলে কমিশন দ্রুত তা অনুমোদন দেবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের টাকা যেন বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানো যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুঁজিবাজারে ব্যবহারে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

এই বৈঠকের আগে পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ। সেখানে আরও কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।