শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ম্যাকসন স্পিনিং শেয়ার নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে টানা কারসাজি চলছে। এবার কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে আজগুবি কারসাজি হয়েছে। পুঁজিবাজারে প্রি মার্কেটে সেশনে নো প্রাইজ লিমিটে ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের আজগুবি দর উঠেছে। লেনদেন শুরুর আগেই দরদাতা কোম্পানিটির একটি শেয়ারের দর হাঁকান ৩ হাজার ২ টাকা।

এরপরে আরও একটি শেয়ারের দর ছিল ৩ হাজার, ২টি শেয়ারের দর ১৬ শ টাকা ও ৫টি শেয়ারের দর ১৫শ টাকা করে। অপরদিকে বিক্রির ঘরে একটি শেয়ারের বিক্রয় মূল্য ছিল ১০ টাকা করে। তবে লেনদেন শুরুর আগেই এসব ক্রয়-বিক্রয়াদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে সবকিছুই ঘটেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন ও উভয় স্টক একচেঞ্জের সার্ভিলেন্সের সামনে। এর আগে নো প্রাইজ লিমিটে বেশ কিছু কোম্পানির ভুতুড়ে ক্রয়াদেশ দিতে দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে এমন ক্রয় ও বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। যদিও এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে দৃশ্যমাণ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

আজগুবি এম আদেশের পর দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় কোম্পানিটির দর ১ টাকা ১০ পয়সা কমেছে। সারাদিনে কোম্পানিটির মোট ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। শেয়ার প্রতি কোম্পানি আয় করেছে ২ টাকা ৭ পয়সা। গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে হিসাব পর্যালোচনা করে রবিবার পর্ষদ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, নো প্রাইজ লিমিটে অনেকেই অদ্ভুতুড়ে ক্রয়-বিক্রির আদেশ দিয়ে থাকেন। বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতেই এমন আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এদিকে ম্যাকসন স্পিনিং হঠাৎ মুনাফার উস্বফল্লণ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। যে কোম্পানি বিগত দিনে ২ বছর লভ্যাংশ দেয়নি সেই কোম্পানির হঠাৎ এমন মুনাফার পিছনে কি রহস্য আছে। বাজারে নানা গুজব রয়েছে, এ কোম্পানির কারসাজি সাথে কোম্পানিটির পরিচালকরা জড়িত রয়েছে। তারা ৭ টাকা শেয়ার গত এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ৩৬ টাকা পর্যন্ত দও বাড়ান। আর এমন অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির ফলে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা দাবি করেন কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব খতিয়ে আসল রহস্য বের হবে।

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ম্যাকসন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের সম্পদ ও আয় প্রতি বছর কমছে। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে মুনাফা। ২০২০ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত প্রান্তিকেও শেয়ার প্রতি আয় আশানুযায়ী নয়। তবু কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে হুহু করে।

ম্যাকসন স্পিনিং মিলসের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ম্যাকসন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস ল্যভাংশ দিয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোন লভ্যাংশ না দিলেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়ে বি ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

কোম্পানিটির মুনাফাও ক্রমাগত কমছে। ২০১৮ সালের জুন শেষে ম্যাকসনের মুনাফা ছিল ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এটি ২০১৯ সালে কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির লোকসান করে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

বিনিয়োগকারী রাশেদ খান বলেন, ‘ভালো ব্যবসা করতে না পেরে লোকসানে থাকা ম্যাকসন স্পিনিং এর শেয়ার দর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে হু হু করে বাড়ছে। গত কয়েক বছর লভ্যাংশও ভালো দিতে পারছে না। তারপর এমন দর বাড়ায় পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে আমার ধারণা।’ তবে দর বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার খাওয়ানোর ২০১০ সালের পর এত বড় লভ্যাংশ ঘোষণা।

সমাপ্ত অর্থবছর কোম্পানিটি ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.০৭ টাকা। আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৭৩ পয়সা। আর ২০২১ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২০.০৯ পয়সা। এই লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে কোম্পানিটি। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২১ নভেম্বর।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, ম্যাকসন স্পিনিংয়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) প্রতি বছর কমতির দিকে। ২০১৭-১৮ তে কোম্পানিটির ইপএস ছিল ০.৪৯ টাকা, ২০১৮-১৯ শেষে কমে ০.১২ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ০.৩৭ টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস দেখানো হয়েছে ০.৬৪ টাকা।

ম্যাকসন স্পিনিংয়ে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) প্রতি বছরই কমছে। ২০১৭ সালের জুন শেষে এনএভি ছিল ১৯.৫৫ টাকা, ২০১৮ সালের জুনে কমে ১৯.১০ টাকা, ২০১৯ সালের জুন শেষে ১৮.৭২ টাকা এবং ২০২০ সালের জুন শেষে এনএভি কমে দাঁড়ায় ১৮.২০ টাকা।

২০০৯ সালে ম্যাকসন স্পিনিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি সময় অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পরিশোধ মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। রিজার্ভ রয়েছে ১৯৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এবং কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৯টি। চলতি বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ১৫.১০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৫৪.৯০ শতাংশ। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম