শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গৎবাঁধা উত্তরে হঠাৎ হার্ডলাইনে যাচ্ছে বিএসইসি। তবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজার গতিশীল রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার গতিশীলতা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে কি-না সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তাদের চিঠি দিয়ে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) রয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে সব কোম্পানি গৎ বাঁধা একই উত্তর দিচ্ছে শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এমন উত্তর দিয়ে কোম্পানিগুলোর খুশি থাকলেও, মোটেও সন্তুষ্ট নয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাই এ পরিস্থিতি স্বচ্ছতার সঙ্গে উত্তোরণের লক্ষ্যে বিধিমালা পরিবর্তন করে কঠোরতা আরোপ করতে যাচ্ছে বিএসইসি।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন লক্ষ্য করেছে, বর্তমানে সব কোম্পানি গা ছাড়া ভাবে উত্তর দেয় তাদের শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে কিছুদিন পর দেখা যায়, ওই কোম্পানিই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে।

তখন স্টক এক্সচেঞ্জ জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোম্পানিগুলো জানায়- সংশ্লিষ্ট তারিখে পরিচালনা পর্ষদ এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি স্বচ্ছতার সঙ্গে উত্তোরণে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ বিষয় কাজ করছে। শিগগিরই কমিশনে ওই সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

সূত্র জানায়, সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেনের বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। বিধিমালায়, কোন বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, কোন কোন বিষয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মধ্যে পড়বে এবং ওই তথ্য কখন প্রকাশ করতে হবে- এমন সব বিষয় ওই বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে শেয়ারের মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কোম্পানি সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করছে কি না, তা যাচাই করে দেখবে বিএসইসি।

সেজন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রকাশিত সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের পর তা বাস্তবায়নের হালনাগাদ অবস্থা নির্ধারিত সময় পরপর অবহিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএসইসি। আর অস্বাভাবিক শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ উদঘাটনের লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে বিএসইসির অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সরেজমিন পরিদর্শন করবে।

এদিকে, বর্তমানে যেসব কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যমূল্য সংবেদনশীল তথ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কোম্পানির উৎপাদনে নেই বা সেসব কোম্পানি উৎপাদনে ফিরবে বলে বাজারে গুজব ছিল, তাদের কারখানা ও অফিস পরিদর্শনের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক কোম্পানি বিএসইসির নজরদারিতে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেসব কোম্পানির কারখানা ও অফিস পরিদর্শন করা হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে (৬ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর) শেয়ারবাজারে ৩১টি কোম্পানির কাছে শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কি-না জানত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: ইমাম বাটন, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জুটস স্পিনার্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সালভো কেমিক্যাল, ঢাকা ডায়িং, জনতা ইন্স্যুরেন্স, ম্যাকসন স্পিনিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, রিং শাইন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট,

আলনিমা ইয়ার্ন, সাফকো স্পিনিং, শ্যামপুর সুগার, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, স্টাইল ক্রাফট, এইচআর টেক্সটাইল, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, আল-হাজ্জ টেক্সটাইল মিলস, রহিমা ফুড করপোরেশন, মিথুন নিটিং, মেট্রো স্পিনিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বিচ হ্যাচারি, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, শ্যামপুর সুগার মিলস ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে কোম্পানিগুলো উত্তর দেয়- তা প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়। আসল ঘটনা আড়াল করতে কোম্পানিগুলো এ ধরনের আচরণ করে থাকে। অধিকাংশ সময়ই সংবেদনশীল তথ্য গোপন করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। পরে শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে। শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়াতেই এ কাজ করে কোম্পানিগুলো। তাই এ বিষয়টি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিএসইসির আরও বিশদভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যেসব কোম্পানি শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, সেসব কোম্পানি সরেজমিন তদন্ত করা প্রয়োজন। এজন্য স্টক এক্সচেঞ্জের পৃথক তদন্ত দল থাকা দরকার। আমরা এ বিষয়ে বিএসইসির কাছে শিগগিরই দাবি জানাবো। শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিগুলোর গৎ বাঁধা উত্তরের সত্যতা খতিয়ে দেখা উচিত।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কমিশন কাজ করছে। মূল সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেনের বিধিমালা ১৯৯৫ সংশোধনের কাজ চলছে। সেখানে- কোন বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, কোন কোন বিষয় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মধ্যে পড়বে এবং ওই তথ্য কখন প্রকাশ করতে হবে- এসব বিষয় ওই বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

তখন শেয়ারের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিগুলোর আর আর গৎ বাঁধা উত্তর দিতে আর পারবে না বলে আশা করছি। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে বিএসইসির অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারে।’

এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। সিএসই’র সার্ভিল্যান্স বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে।’