শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের সিমেন্ট শিল্পের মুনাফায় ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলো চলতি বছরে ভালো ব্যবসা করেছে। মূলত করোনাকালীন সময়ে সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে সিমেন্টের ভালো চাহিদা থাকার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে তালিকাভুক্ত সাতটি সিমেন্ট কোম্পানির মুনাফায় উল্লস্ফল হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো বিগত কয়েক বছরের তুলনায় ব্যবসায় চমক দেখিয়েছে।

মুলত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশীয় সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিট মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এমআই সিমেন্টের। তাদের এ সময়ে নিট মুনাফা বেড়েছে গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৮৩১ শতাংশ বেশি।

মেঘনা সিমেন্ট: জানুয়ারি-মার্চ সময়ে মেঘনা সিমেন্ট মিলসের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৮২ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ছিল ২২৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। আর গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেড়ে ৭৩৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৫৩ শতাংশ।

এমআই সিমেন্ট: জানুয়ারি-মার্চ সময়ে এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরির রাজস্ব আয় হয়েছে ৫১১ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ছিল ৪৪৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়েছে ৯ গুণেরও বেশি।

গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর এ সময়ে কোম্পানিটি গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ৭০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট: জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রিমিয়ার সিমেন্টের আয় ১৪ শতাংশ বেড়ে ৩৬৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে আট গুণেরও বেশি। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ৯৫৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে তিন গুণ।

আরামিট সিমেন্ট: জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই তিন মাসে আরামিট সিমেন্টের রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমে ৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এ সময়ে কোম্পানিটি আগের বছরের লোকসান কাটিয়ে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে ১৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট: চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের বিক্রি হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৩৮২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১০ গুণের বেশি।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ: জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের রাজস্ব আয় ২৩ শতাংশ বেড়ে ৬৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৫২ কোটি টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৯৮ শতাংশ।

মূলত বাজারে নতুন সিমেন্ট আনার পাশাপাশি চুনাপাথর চিপের ব্যবসা থেকে আয় যোগ হওয়ার কারণে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া প্রচলিত সিমেন্টের ব্যবসায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানিটির।

কনফিডেন্স সিমেন্ট: কনফিডেন্স সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই–সেপ্টেম্বর, ২০২০) অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) আগের হিসাব বছরের চেয়ে বেড়েছে। এ সময়ে পণ্য বিক্রি ১৫ শতাংশ বাড়লেও সুদ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় কনফিডেন্স সিমেন্টের নিট মুনাফা বেড়েছে ২৪৬ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাজারে সিমেন্টের চাহিদা বেশ ভালো ছিল। পাশাপাশি ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যয় আগের তুলনায় বেশ কমে গেছে। ফলে ব্যবসা বাড়ার পাশাপাশি ব্যয় কমে যাওয়ার কারণে এ সময়ে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে।