শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের চাপে ও রাজস্ব আহরণ বাড়াতে প্রতি বাজেটেই সরকার সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ায়। এতে করে ২০১৫ সাল থেকে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১১৭ শতাংশ। এ সময় সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানি বিএটি বাংলাদেশের নিট মুনাফাও দ্বিগুণ হয়েছে। বিএটির নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

দেশের সিগারেটের বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি বিএটি বাংলাদেশের হাতে। শুধু এই কোম্পানির মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে গড়ে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। ২০১৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বিএটির সিগারেট বিক্রি থেকে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্ব ছিল ৭ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের একই সময়ে ১৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময় কোম্পানির নিট মুনাফা ৪৩৮ কোটি থেকে ৮৭২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

২০১৫ সালের পর বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। যদিও সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের কারণে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রির পরিমাণ কমছে। করোনার সময়েও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কোম্পানিটির নিরীক্ষিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বিএটি বাংলাদেশ দেশে ৫ হাজার ৩২০ কোটি স্টিক সিগারেট বিক্রি করে। ২০১৮ সালে বিক্রি কিছুটা কমে ৫ হাজার ১৪২ কোটি ৫০ লাখ স্টিকে নেমে আসে। আর ২০১৯ সালে সিগারেটের দাম আরও বাড়ায় বিক্রি নেমে আসে ৫ হাজার ৭৪ কোটি ৪০ লাখ স্টিকে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সিগারেট বিক্রি প্রায় ৫ শতাংশ কমলেও নিট টার্নওভার বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ।

দেশে করোনা সংক্রমণের পর এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে ২ হাজার ১৭৬ কোটি স্টিকে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। অবশ্য করোনার আগে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সিগারেট বিক্রিতে বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। এতে করে চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। এতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে আয় কমলেও সার্বিকভাবে ৯ মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।

চলতি বছরের ৯ মাসে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে সিগারেট বিক্রি ও রপ্তানি থেকে বিএটি বাংলাদেশের মোট আয় হয় ২০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে সিগারেট বিক্রি থেকে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৩৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর ফলে সিগারেট বিক্রি থেকে বিএটি বাংলাদেশের নিট আয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।

বিএটি বাংলাদেশের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি প্রথম প্রান্তিকে সিগারেট বিক্রি থেকে আয়ের উল্লম্ফনে পুরো ৯ মাসের নিট মুনাফায় বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটি উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় সাশ্রয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশের বিক্রি থেকে আয় ও নিট মুনাফা প্রায় ৪৭ শতাংশ বাড়ে। দ্বিতীয় প্রান্তিকেও পরিচালন ব্যয় ৮৪ শতাংশ কমলেও তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই সময়ে উৎপাদন ব্যয় ২৪ শতাংশ কমে যাওয়ায় নিট মুনাফা ৬৯ শতাংশ বাড়ে। এর ফলে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে বিক্রি থেকে আয় কমলেও উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনায় নিট মুনাফার ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রেখেছে।

চলতি বছরের ৯ মাসে বিএটি বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যয় হয় বিক্রি থেকে আয়ের ৪৭ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ৫১ দশমিক ৭২ শতাংশ। একই সময়ে পরিচালন ব্যয়ও ২২ শতাংশ কমিয়ে আনে কোম্পানিটি। আমদানিকৃত পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া ও স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে বলে বিএটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় শেষে চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানির পরিচালন আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছর কোম্পানির সুদবাবদ ব্যয়ও কমেছে। ২০১৯ সালে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে সুদবাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে ৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

চলতি বছরের ৯ মাসে বিএটি বাংলাদেশ আয়কর বাবদ পরিশোধ করেছে ৯১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ফলে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৭২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। এ সময়ে কারখানায় তৈরি সিগারেট ও তামাক পাতা রপ্তানিতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে সিগারেট বিক্রি থেকে নিট আয় কমলেও আয়কর বাবদ কম ব্যয় হওয়ায় আগের বছরের তুলনায় নিট মুনাফা ৫ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানিটি সিগারেট বিক্রি থেকে মোট আয়ের ৮৩ দশমিক ১ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ ব্যয় করেছে।