শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৯ সালের ব্যবসায় নগদ লভ্যাংশে ঝুঁকেছে। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৬ বীমা কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে। এছাড়া নগদের পাশাপাশি ২টির পর্ষদ বোনাস শেয়ার সুপারিশ করেছে। শেয়ারবাজারের চলমান দুঃসময়ে বীমা কোম্পানিগুলোর এই নগদ লভ্যাংশ সুপারিশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও লিজিং কোম্পানিগুলোর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৯ সালের ব্যবসা নিয়ে ২০২০ সালে ৭টি বীমা কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে মুনাফা হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ কোন লভ্যাংশ সুপারিশ করেনি। বাকি ৬ কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করা হয়েছে। যা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হবে।

বীমা কোম্পানিগুলোর আকার বা পরিশোধিত মূলধন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি থেকে অনেক ছোট। যাতে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণও কম। তবে পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় লভ্যাংশের হার কম না।

বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স: বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ২০১৯ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ১.০৮ টাকা মুনাফা হয়েছে। এর বিপরীতে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা বিবেচনায় প্রতিটি শেয়ারে ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১.০৮ টাকার মুনাফা বিবেচনায় এই লভ্যাংশের পরিমাণ ১০২ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি মুনাফার চেয়েও বেশি লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১.০৮ টাকা হিসেবে মোট ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৫ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। কোম্পানিটি ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারপ্রতি ১.১০ টাকা করে মোট ৫ কোটি ৯৪ টাকা ২৯ হাজার ৯৮০ টাকা বা ১০২ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে। এ হিসাবে কোম্পানিটি মুনাফার সাথে রিজার্ভ থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৫ টাকা বা ২ শতাংশ যোগ করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে।

ইউনাইটেড ইনসিওরেন্স : ইউনাইটেড ইনসিওরেন্স ২০১৯ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ১.৯৫ টাকা মুনাফা হয়েছে। এর বিপরীতে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা বিবেচনায় প্রতিটি শেয়ারে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১.৯৫ টাকার মুনাফা বিবেচনায় এই লভ্যাংশের পরিমাণ ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি অর্জিত মুনাফার অর্ধেকের বেশি শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ হিসেবে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১.৯৫ টাকা হিসেবে মোট ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নিট মুনাফা হয়েছে।

অর্জিত মুনাফার ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারপ্রতি ১.১০ টাকা করে মোট ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা ৫৬.৪১ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করবে। অর্জিত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বিতরণের পর কোম্পানির কাছে আরো ৩ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা বা ৪৩.৫৯ শতাংশ থাকে। যা কোম্পানির রিজার্ভে যোগ হবে।

প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স : প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ২০১৯ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ১.১৭ টাকা মুনাফা হয়েছে। এর বিপরীতে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা বিবেচনায় প্রতিটি শেয়ারে ৪ শতাংশ (২% নগদ ও ২% বোনাস) লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শেয়ারপ্রতি ১.১৭ টাকার মুনাফা বিবেচনায় এই লভ্যাংশের পরিমাণ ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ নগদ।

কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১.১৭ টাকা হিসেবে মোট ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৯২৪ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। অর্জিত মুনাফার ৪ শতাংশ হিসেবে শেয়ারপ্রতি ০.৪০ টাকা করে মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ২০৪ টাকা বা ৩৪.১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে থেকে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারপ্রতি ০.২০ টাকা করে মোট ৬৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬০২ টাকা বা ১৭.০৯ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে। এছাড়া সমপরিমাণ বা ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করায় একই পরিমাণ অর্থ পরিশোধিত মূলধন বাড়বে। বাকি ২ কোটি ৫৫ লাখ ৮১ হাজার ৭২০ টাকা বা ৬৫.৮১ শতাংশ রিজার্ভে যোগ হবে।

এদিকে কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৮ সালের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল। ওই বছর কোম্পানিটি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করলেও এবার ২ শতাংশ বোনাসের পাশাপাশি ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

নিটল ইন্স্যুরেন্স : নিটল ইন্স্যুরেন্স ২০১৯ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ৩.২২ টাকা মুনাফা হয়েছে। এর বিপরীতে অভিহিত মূল্য ১০ টাকা বিবেচনায় প্রতিটি শেয়ারে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৩.২২ টাকার মুনাফা বিবেচনায় এই লভ্যাংশের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি অর্জিত মুনাফার প্রায় অর্ধেক লভ্যাংশ হিসেবে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কোম্পানিটির ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ৩.২২ টাকা হিসেবে মোট ১২ কোটি ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৮ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারপ্রতি ১.১৫ টাকা করে মোট ৬ কোটি ০৩ টাকা ১১ হাজার ৪৬০ টাকা বা মোট মুনাফার ৪৬.৮৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে। অর্জিত মুনাফার থেকে লভ্যাংশ বিতরণের পর কোম্পানির কাছে আরো ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৮৮ টাকা বা ৫৩ শতাংশ থাকে। যা কোম্পানির রিজার্ভে যোগ হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘ দিন থেকে সংকট মহুত পার করে আসছে। তার ওপর নতুন করে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাব। দুই সংকট এক হয়ে চরম সংকটে অনেকটা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পুঁজিবাজার। চলমান এ মন্দাবস্থায় বীমা কোম্পানির এ উদ্যোগ বিনিয়োগকারিদের আশা জাগিয়েছে। যা পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দেবে বলে মনে করেন তারা।

এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারের এই দু:সময়ে কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলে বিনিয়োগকারীরা লোকসান কিছুটা কাটিয়ে নিতে পারবো। একদিকে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট অন্যদিকে করোনাভাইরাসে পুরো অর্থনীতি লন্ডবন্ড হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বাঁচানো উচিত। এই মন্দাবস্থায় ৬ বীমা কোম্পানির ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ খুবই ইতিবাচক খবর। তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বীমা কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে।